বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী বৃদ্ধি পেলে কয়েক শতাব্দীতে বিশ্বের বৃহত্তম বরফ স্তরটি গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ‘কয়েক মিটার’ বৃদ্ধি পেতে পারে। বুধবার প্রকাশিত বৃটিশ সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়।
ডারহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, যদি বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেশি থাকে তাহলে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা আইস শিট গলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় অর্ধ মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। তাদের এই গবেষণা রিপোর্ট বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত হয়েছে।
যদি এর বাইরে নির্গমন আরো বেশি হতে থাকে তবে ইএআইএস গলে ২৩০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় এক থেকে তিন মিটার এবং ২৫০০ সালের মধ্যে দুই থেকে পাঁচ মিটার হতে পারে।
তবে যদি নির্গমন নাটকীয়ভাবে হ্রাস করা যায়, তাহলে মূল্যায়ন অনুসারে ইএআইএস গলন কমে যাওয়ায় ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় দুই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।
এটি গ্রিনল্যান্ড এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা থেকে অনুমিত বরফ গলনের ক্ষতির চেয়ে অনেক কম হবে।
গবেষণা রিপোর্টের প্রধান লেখক ডারহাম ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের ক্রিস স্টোকস বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ থেকে একটি মূল উপসংহার হল যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা বরফের শীটটির ভাগ্য আমাদের হাতেই রয়ে গেছে।’
‘এই বরফের শীটটি এই গ্রহে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। এতে সমুদ্র পৃষ্ঠের ৫২ মিটার উচ্চতার সমতুল্য জলরাশি রয়েছে এবং এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এই ঘুমন্ত দৈত্যটিকে জাগ্রত না করে ঘুমন্ত রাখতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে, সেটা অনুসরণ করলে আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে পারি এমনকি পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা বরফের শীট গলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারি এবং বৈশ্বিক সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব সীমিত করতে পারি।’
এই গবেষণা দলে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তারা ২১০০, ২৩০০ এবং ২৫০০ সাল নাগাদ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা এবং বরফের শীটে তাপমাত্রার প্রভাবের মডেল কম্পিউটার সিমুলেশন করেন।
তারা প্রমাণ পেয়েছেন যে ‘তিন মিলিয়ন বছর আগে, যখন তাপমাত্রা বর্তমানের তুলনায় প্রায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। তখন ইএআইএস-এর কিছু অংশ ‘ধ্বসে পড়ে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক মিটার বৃদ্ধি পায়।’