শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

এইচআইভি বিষয়ে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা

অভিজিত বনিক,বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২২

অভিজিত বনিক
প্রতিনিয়িত এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বাংলেদেশসহ বিশ্বের বহু মানুষ। এর প্রধানতম কারণ হলো জনসচেতনতা।শুধু মাত্র জনসচেতনতাই পারে এইচআইভির ভয়াবহ অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। যদিও UNAIDS-এর তরফে আরও জানানো হয়েছে, ১৯৯৭ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে সংক্রমণ প্রায় ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে ২০২০-তে নতুন করে আরও প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এইডসে। তবুও ২০১০ সালে যে সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হতেন, তার তুলনায় ৩১ শতাংশ কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকী ২০১০ সালের পর থেকে শিশুদের মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাপী এইচআইবি বিষয়ে নানান কর্মসূচি পালিত হলেও এইচআইভি (HIV)-এর সঙ্গে লড়াইটা কিন্তু সহজ হয়ে যায়নি। এই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা বেশ কঠিন। এখনও বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এইডসে (AIDS)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়। বা চিকিৎসা হলেও তা শুরু হতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে যায়। যিনি এইডসে ভুগছেন তিনি হয়ত নিজেও জানেন না যে এই মারণ রোগে আক্রান্ত, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO)। ২০১৫-তে WHO এর তরফে যে গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, যাঁরা এইচআইভি-তে আক্রান্ত বা এইচআইভি আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের অবিলম্বে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট ( Antiretroviral treatment) শুরু করতে হবে। রোগ নির্ণয়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
এইডস (AIDS) নিয়ে এখনও মানুষের মনে অনেক রকম ভয় কাজ করে। আর সেই ভয়ের সঙ্গে রয়েছে ভুল ধারণা এবং অজ্ঞতা। ১৯৮০- তে বিশ্বজুড়েই এইডস মহামারীর আকার নিয়েছিল।
প্রতিবছরের ১ ডিসেম্বর বিশ্ব জুড়েই পালন করা হয় এইডস দিবস। HIV ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতেই সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই দিনটি পালন করা হয়। ১৯৮৮- সালে মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই এই বিশেষ দিনটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। UNAIDS-এর মতে এখনও পর্যন্ত সারাবিশ্বের প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ এইডসে আক্রান্ত। প্রায় ৩৬.৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এইডসে। বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবেই AIDS-কে চিহ্নিত করেছে WHO।
সংক্রমিতের সংখ্যা কমলেও গত বছর বিশ্বে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭৭ লক্ষের কাছাকাছি। মারা গিয়েছে ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ। তবে নতুন করে যাতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু না হয় সেই চেষ্টায় রয়েছে হু। ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসকে সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েই চলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এইডসের সংক্রমণ আর মৃত্যুর হার ঠেকাতে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার জন্যই কমছে নআক্রান্তের সংখ্যা, দাবি হু-এর। তবে বিশ্বে এইডস আক্রান্তের অধিকাংশই শিশু। ইউনিসেফের মতে সেই সংখ্যাটা প্রায় ২১ লক্ষর কাছাকাছি। সেই সঙ্গে ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৮৫০ শিশু সংক্রমিত হয়েছে এইচআইভি-তে। মারা গিয়েছে ৩৩০ জন শিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায়নি শিশুরা। বা আক্রান্ত জানতে পারার পরও সেই তুলনায় যত্ন পায়নি তারা।
কোভিডের প্রভাবে বিশ্ব জুড়েই বিঘ্নিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এমনকী কোভিডের কারণে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। সেই সময় এইডসের চিকিৎসাও হয়নি ঠিকমতো। বিভিন্ন দেশ এর জন্য প্রতিবাদও জানিয়েছে। ৭৫ শতাংশ বাধা পেয়েছে এইডসের চিকিৎসা। কিন্তু তার সঙ্গে UNAIDS- এও জানিয়েছে যাঁরা এইচআইভি-তে আক্রান্ত তাঁদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি অন্তত ৩০ শতাংশ কম অন্যান্য মানুষদের থেকে। এমনকী একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কোভিড সংক্রমণ যখন শীর্ষে তখন ৭৩টি দেশ আগে ভাগে আ্যান্ট্রিরেট্রোভাইরাল (ARV) স্টক করেছিল। যে কারণে পরবর্তীতে অনেক দেশই ওষুধ সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগেছিল।

AIDS-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছে বহু মানুষ। যদিও তাদের তরফে জানানো হয়েছে, সংক্রমণ রুখে দেওয়ার যে লক্ষ্য তাঁরা নিয়েছিলেন ২০২০-এর মধ্যে সেই লক্ষ্যপূরণ হয়নি। বেশ কিছু জায়গা থেকেই এসেছে মৃত্যুর খবর। এইচআইভি-তে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।
UNAIDS- এর মতে মানুষ আগের থেকে কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছেন। রোগ সংক্রমণ, চিকিৎসা নিয়ে ওয়াকিবহাল নিজেরাই। এছাড়াও HIV ভাইরাসের ভাইরাল লোড আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। ২০১৯-এও যত শতাংশ মানুষ এই মারণ রোগের শিকার হয়েছেন ২০২১-এ সেই সংখ্যাটা কমেছে অনেকটাই। নিয়মিত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের পর এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্য়া কমেছে ৫৯ শতাংশ। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে এই সংখ্যাটা ৭৩ শতাংশ হতে হবে। আর যে কারণে বিশ্বব্য়াপী এই লক্ষ্যপূরণ কার্যত অসম্ভব।

এইচআইভি ভাইরাস বিষয়ে বিশেজ্ঞগণ জানিয়েছেন গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এইডস সংক্রমণ রোধে আরও জোরদার সচেতনতা বাড়াতে হবে। কোন গর্ভবতী মহিলা এইসডে আক্রান্ত সন্দেহ হলে প্রথমেই তাঁর প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। যৌনকর্মী, রূপান্তরকামী এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে আরও যোগাযাগ বাড়াতে হবে। তাঁদের সঙ্গে ভাল আচরণ রাখতে হবে। মানসিক দিক দিয়ে তাঁরা যাতে ভেঙে না পড়েন এবং বৈষম্যের স্বীকার না হন সেদিকে নজর দিতে হবে। তাহলেই এইডস ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ