জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল নিয়ে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। উপস্থিত থাকলেও অনেক পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল করানো হয়েছে। এ পরীক্ষায় ফেল করেছে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে এক বিষয়ে ফেল করানো হয়েছে। ভালো পরীক্ষা দিয়েও আশানুরূপ ফল না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক পরীক্ষার্থী। ফলে অসঙ্গতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। দ্রুত এসব ভুল সংশোধন করা না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তারা। একইসাথে এক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দাবি জানিয়েছেন।
ঈদের আগে গত ২০ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবার পাসের হার ছিল ৭২ শতাংশ। গতকাল সোমবার এ পরীক্ষার সমন্বিত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত এ ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২০ জুলাই অনার্স চতুর্থ বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে যেখানে ৭২ শতাংশ পাশ আর ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ফেল করা ৬০ হাজার ১৫৭ জনের মধ্যে ১ বিষয়ে ফেল প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। আমাদের পরীক্ষা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২ ভাগে পরীক্ষা নিয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষের রেজাল্ট পাই ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে। যেখানে করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ বন্ধ, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দেয়া হয়েছে , প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ শতাংশ পাস করাচ্ছে সেখানে আমাদের এই পরিস্থিতিতে ১ বিষয়ে ফেল দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন , তাদের পরিবারের আশা আকাঙ্ক্ষা, ১ বিষয়ে ফেল করা প্রত্যেক শিক্ষার্থী ফেল করা বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়ে ও ফেল করেছে। ২০১৯ এ পরীক্ষা শুরু হলে ও করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ এ এসে শেষ হয়। ফলে দীর্ঘ বিরতিতে থেকে পড়াশোনা থেকে বিরত থাকায় এবং মহামারির এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে লড়াই করে টিকে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেক মানসিক চাপ নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছিল। ৪ বছরের কোর্স ৬ বছর সময় নেয়ায় চাকরির বয়স কমে যাচ্ছে, অনেকেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা দ্রুত এসব ভুল সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ফলের অসঙ্গতি দূর করা না হয়ে তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের স্বপ্ন গুলোর বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র ১ বিষয়, আবার কবে করোনা পরিস্থিতিতি ঠিক হবে, পরীক্ষা হবে সেই পর্যন্ত আমাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, প্রয়োজনে রেজাল্ট না দিলেও এক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের অন্তত মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হোক। ৭ কলেজে এই নিয়ম থাকলে আমরা কেন বঞ্চিত হবো।
তেজগাঁও কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ইকবাল হাসান জানান, অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের ফলে তাকে ‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার’ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। তার কলেজে অনেক শিক্ষার্থীকে এ বিষয়ে গণহারে এফ গ্রেড দেয়া হয়েছে। খাতা দেখায় অসঙ্গতির কারণেই এমন ফল বলে তিনি দাবি করেন।
চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের মো. ফরহাদ জানান, ‘ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে তাকে ফেল দেয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার্থীর দাবি কোনোভাবেই তার ফেল করার কথা ছিল না।
একই কলেজের আফরিন সুলতানা বলেন, তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’ বিষয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনি এ বিষয়ে খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন।