‘ভারত কেবল হিন্দুদের দেশ হতে পারে না বা কেবল মুসলিমদের দেশও হতে পারে না। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমি চাই দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকুক। সেটাই ভারতের ঐতিহ্য ও গরিমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’ সহিষ্ণুতার প্রশ্নে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট ভয়ের কারণ আছে বলেও মনে করেন ভারতের নোবেলজয়ী অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। প্রতীচি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘ব্যাক টু স্কুল’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অমর্ত্য সেন ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক অনিতা রামপাল, বেলজিয়াম বংশোদ্ভুত ভারতীয় পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ জিন ড্রিজ, অর্থনীতিবিদ এ. কে. শিবকুমার, রাজ্যটির সাবেক অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত, অধ্যাপক ও সাবেক তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুগত বসুসহ বিশিষ্টরা।
সহিষ্ণুতার প্রশ্নে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ভারতের সহিষ্ণুতার ইতিহাস রয়েছে। জিউস, খ্রিষ্টানসহ অনেকেই ভারতে এসেছেন। আমরা তখন সহিষ্ণু ছিলাম, তাই আমাদের সহিষ্ণুতার ইতিহাস আছে। কিন্তু এর থেকেও জরুরি মানুষের আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা। এটা দেশবাসীর আরও বেশি করে বোঝা উচিত।’
এদিন ভারতে সহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে ভয়ের আবহ আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সহিষ্ণুতা নয়, ভারতে ঐক্যের অভাব আছে বলে জানান ভারতের নোবেলজয়ী অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। অন্নদাশঙ্করের একটি কবিতার লাইন তুলে ধরে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর উপর রাগ করো, তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো…। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের ক্ষেত্রে খাটে না, এই ঘটনা যদি বড় রকমের হতে থাকে এবং একটা দলের উপর যদি আর একটা দল তাদের শক্তি ব্যবহার করতে থাকে তবে সেটাও তেলের শিশির মতো অবস্থা হবে। সেখানে ভারত জাতিকে বিভক্ত করার যে প্রচেষ্টা- তার অনেকটা ফল আমরা দেখতে পাই। সেই ফলের মধ্যে কুফল খুবই বেশি। সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সত্যিই খুব কারণ আছে।
অমর্ত্য সেন রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধনে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও প্রশাসনের সামঞ্জস্য থাকা উচিত। কারণ সাধারণ মানুষ বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে থাকে।