কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামে যখন শেষ বাঁশি বাজল, তখনই শেষ হলো দীর্ঘ ৬৪ বছরের অপেক্ষার। স্টেডিয়ামে আনন্দের ঢেউ শুরু হলো। বেঞ্চ থেকে লাফিয়ে উঠলেন গ্যারেথ বেল। ৮২ মিনিটের দিকে তাঁকে তুলে নিয়েছিলেন ওয়েলসের কোচ। কিন্তু ওয়েলসের উদ্যাপনের শুরুটা হলো বেলকে ঘিরেই।
প্রথমে বেঞ্চেই তাঁর পাশে থাকা সতীর্থরা এসে জড়িয়ে ধরলেন, মাঠ থেকে ছুটে এলেন বাকিরাও। সবাই লাফিয়ে তাঁর পিঠে চড়ছেন। এক সময় দেখা গেল সতীর্থদের ভার নিতে না পেরে বেল মাঠে পড়ে আছেন, বাকিরা খুশিতে লাফাচ্ছেন। আর, খুশিতে চোখ ঝলমল করছে গ্যারেথ বেলের।
দীর্ঘ ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া বলে কথা! যে সুযোগ ওয়েলস পেয়েছে ইউরোপীয় অঞ্চলের প্লে-অফের ফাইনালে ইউক্রেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে। কাতার বিশ্বকাপে গ্যারেথ বেলরা খেলবেন ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র-ইরানকে নিয়ে গড়া ‘বি’ গ্রুপে।
অন্যদিকে, স্বপ্নপূরণ হয়নি ইউক্রেনের। তবে, ম্যাচ শেষে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে ভুলে যাননি আন্দ্রিই ইয়ারমোলেঙ্কো-ওলেকসান্দর জিনচেঙ্কোরা।
২ জুন প্লে-অফের সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারানো ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখেই দল নামিয়েছেন ইউক্রেন কোচ ওলেকসান্দর পেত্রাকভ। ওয়েলস এর আগে সর্বশেষ ম্যাচটা খেলেছিল ১ জুন, উয়েফা নেশনস লিগে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে সেরা একাদশটা খেলাননি কোচ রব পেইজ। গ্যারেথ বেল-অ্যারন রামসে-জো অ্যালেন কেউই ছিলেন না সেদিন। এই ম্যাচের জন্যই নিজের সেরা খেলোয়াড়দের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পেইজ।
তবে, কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামে তারপরেও প্রথমার্ধটা ইউক্রেনই দাপটের সঙ্গে খেলল, সুযোগ পেল বেশি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেরা গোল তো পেলই না, উলটো ৩৪ মিনিটে গোল খেয়ে বসল। বাঁ পাশে বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে নেওয়া গ্যারেথ বেলের ফ্রি-কিক বিপদমুক্ত করতে হেড করেছিলেন ইউক্রেন অধিনায়ক আন্দ্রিই ইয়ারমোলেঙ্কো। বল তাঁর মাথায় লেগে চলে যায় নিজেদের জালে।
বিরতির পর মাঠে নামার মিনিট চারেকের মধ্যেই প্রতি আক্রমণ থেকে পাওয়া একটা দারুণ সুযোগ নষ্ট করেছেন ওয়েলসের অ্যারন রামসে। ইউক্রেন অবশ্য হাল ছাড়েনি। একের পর এক আক্রমণ করে গেছে, ওয়েলস মূলত অপেক্ষায় থেকেছে প্রতি আক্রমণের।
রক্ষণভাগে বেশ সময় কেটেছে ওয়েলসের লেফট ব্যাক বেন ডেভিস ও গোলরক্ষক ওয়েইন হেন্নেসির। এর মধ্যেই ৭৫ মিনিটে ইউক্রেনকে প্রায় নিশ্চিত গোল থেকে বাঁচান গোলরক্ষক জর্জ বুশান, গ্যারেথ বেলের দুর্দান্ত গতির শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি।
পরের মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়ারমোলেঙ্কোও। কিন্তু, আরও একবার ওয়েলসের ত্রাণকর্তা হয়ে দেখা দেন বেন ডেভিস। ৮৪ মিনিটে ভিতালি মিকোলেঙ্কোর ক্রসে হেড করেছিলেন বদলি নামা আর্তেম দোবিক। কিন্তু, অবিশ্বাস্যভাবে সেই হেড ঠেকিয়ে দেন ওয়েইন হেন্নেসি। গোলের দেখা তাই আর পাওয়াই হলো না ইউক্রেনের। অধরা থেকে গেল ২০০৬ সালের পর আরও একটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন। ওদিকে কাতারের টিকিট নিশ্চিত করে ওয়েলস মেতে উঠল বুনো উদ্যাপনে।