শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ: ফখরুল

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০২২

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পাঁচ পাঁচটি বছর পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশের অবৈধ, অনির্বাচিত গণবিচ্ছিন্ন সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত শুরু থেকেই এ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে। গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত একটি সংবাদ অনুযায়ী প্রতিবছর ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মনিচ্ছে। সে হিসেবে গত ৪ বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং এ সংখ্যা দিন-দিন বাড়তেই থাকবে।’

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত আছেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, নারী পাচার ও নানাবিধ অসামাজিক ও আইন বিরোধী কার্যকলাপে সৃষ্ট অশান্ত ও অস্থির পরিস্থিতি, মাদক চোরাচালান ও মাদক পাচারে রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া, রোহিঙ্গাদের অন্তরন্যে রোহিঙ্গা নেতা হত্যা- ইত্যাদি বিষয় চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে ভালো ভবিষ্যতের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেমন সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অপরদিকে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগণের আবাসন ও খাদ্যের যোগান দেয়া, মুরানিটারি ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতা বিধান, স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান, ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা

সন্তানদের শিক্ষা ও ব্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, বিনোদন, জীবনাচার ইত্যাকার বিষয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নির্ভর এক মহাকর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে কোভিড হয়ে ইউএনএইচআর-এর মুখপাত্র রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এর জন্য আরও আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। এদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য দরকার পুষ্টি, আশ্রয় সামগ্রী, পয়ঃনিষ্কাশন ও জীবিকায়ন সুবিধা। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একা’র সংকট নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট, আন্তর্জাতিক বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্বুদ্ধ কিংবা কনভিন্স করতে পারেনি।

বাংলাদেশ সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না। যদিও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজে রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে রায় দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনের হত্যাকাণ্ডকে জেনোসাইড আখ্যায়িত করেছে, এবং আইসিসি রোহিঙ্গাপীড়নের হোতা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে, তথাপি রোহিঙ্গা সমস্যার মূল চ্যালেঞ্জ তথা নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাঘ হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্ব দরবারে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে বন্ধু রাষ্ট্রদের এবিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য রাখাইনে মুসলিম জনপদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা যখন কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়, তখন মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পরিবর্তে সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সহমর্মিতা প্রকাশ করে, এবং অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সাহায্য প্রদানের আশ্বাস প্রদান করে।
এদিকে চীন সরকার একদিকে বরাবরের মতো মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের ঘোষণা অব্যাহত রাখে। অদ্যাবধি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি সাধিত হয়নি। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ চলমান রয়েছে বলে বলা হয়। বাস্তবতা হলো গত ৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও সেদেশে ফেরত পাঠান সম্ভব হয়নি।

এদিকে গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছে সেদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দেয় প্রক্রিয়ায় কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি সাধিত হয়নি। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় পদক্ষেপ চলমান রয়েছে বলে বলা হয়। বাস্তবতা হলো গত ৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও সেদেশে ফেরত পাঠান সম্ভব হয়নি। এদিকে গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছে। সেদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি বরং আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।

এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি এখন আগের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরও কার্যকরী ও ফলপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠান সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও জোরালো রাজনৈতিক তৎপরতার চালাতে হবে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের ওপর প্রচণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দুঃখজনক হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদ করলেও আবার তাদের অনেকের সাথেই মিয়ানমারের বড় ধরনের ব্যবসায়ীক সম্পর্কও রয়েছে। এই দ্বৈত অবস্থান চিহ্নিত করে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ফোকার্ড কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তা বন্ধ করা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশবাসীকে আমরা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন সে সময় উদ্ভূত রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধান করা সম্ভব হয়েছিল তাদের রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্ব এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতাসীন থাকার কারণে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল এবং স্বৈর সরকার হিসেবে পরিচিত একটি জনমেন্ডেটহীন সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো একটি জটিল ও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র একটি জনবান্ধব গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারাই এটা সম্ভব। যা বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অনুপস্থিত। তাই বাংলাদেশের জনগণ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে আলাদাভাবে দেখলে চলবে না। একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও স্থবিরতার প্রধান কারণ। এই মুহূর্তে সর্বাগ্রে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষেই সম্ভব রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ