ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সিসার দূষণ। নীরবে হাজারও মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। ২০১৯ সালে শুধু সিসার দূষণেই দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পিলে চমকে ওঠার মতো এমন তথ্য উঠে এসেছে ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায়। আর তা বেশি ছড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানায়।
বয়সটা মার্বেল-ডাংগুলি খেলার। তবে নাটাই-সুতো-ঘুড়ির সে উচ্ছ্বাসটা শিহাবের জীবনে আর ১০ জন শিশুর থেকে কম। মা-বাবার ধারণা ছিল, বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা হয়নি। নীরব ঘাতক সিসা ধাতু বাসা বেঁধেছে শিহাবের শরীরে। একই অবস্থা তার বড় ভাই সাইমেরও।
শুধু শিহাব-সাইমই নয়, মাত্রাতিরিক্ত সিসার ঝুঁকিতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের রাজাবাড়ি গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি যতদিনে আমলে নিয়েছেন ততদিনে ঢের ক্ষতি হয়েছে। তাই গ্রামবাসী দুটি অবৈধ ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা বিদায় করছেন।
দেশের অনেক জায়গাতে এখনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে সিসা ছড়ানোর এমন কর্মকাণ্ড চলছে। পিওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, একটা গ্রামের ভেতরে বিষের মতো দুটি কারখানা ছিল। এখানে যে দূষণটা আছে তা সরানো খুবই জরুরি।
বাংলাদেশে সিসা দূষণের চিত্র কতটা ভয়াবহ তা সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেল। যেখানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে শুধু সিসার দূষণেই দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অন্য রাসায়নিক দূষণ তো রয়েছেই। সব মিলে ওই বছর, পরিবেশ দূষণে ২ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিসা দূষণ ঠেকাতে না পারলে সামনে কম বা সীমিত বুদ্ধিসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অপেক্ষা করছে।
এশিয়া অঞ্চলের পিওর আর্থ প্রকল্পের পরিচালক গ্যাব্রিয়াল সানচেজ ইবারা বলেন, বিশ্বের ৮০ কোটি শিশু সিসার দূষণে ভুগছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন কোটি বাংলাদেশের। সীসার কারণে সব বয়সীদের মারাত্মক শারীরিক জটিলতা হতে পারে। এর প্রভাবে শিশুদের পূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের স্নায়বিক জটিলতা বাড়ে। আচরণগত সমস্যা তৈরি।
পরিবেশ অধিদ্প্তরের বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনার উপ-পরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিসা যত ক্ষতিকারকই হোক না কেন এ নিয়ে জনসচেতনতার ঘাটতি আছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত সিসার বিষক্রিয়ার চিকিৎসা নেই। এমন বাস্তবতায় সিসার পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।