শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাইবার আইনের প্রত্যাহার হচ্ছে ৫৮১৮ মামলা নদী দূষণমুক্ত করা গেলে পরিবেশ উন্নত হবে ২৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক অফিস আদালত খুলেছে, যানচলাচল স্বাভাবিক ছাগলকাণ্ডে মতিউর ও তার স্ত্রী এবং সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত বরুড়ায় মামার বিরুদ্ধে ভাগিনার প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ! মোশারফ প্যারিস অলিম্পিকে ডাক পেলেন অলিম্পিক রিংয়ে সাজবে আইফেল টাওয়ার প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা! বরিশাল প্লে-অফে শক্তিশালী হচ্ছেন রওশন, দুর্বল জিএম কাদের! খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মিনিট পরপর চলবে মেট্রোরেল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন ৪৮ নারী প্রার্থী সিরিজ নির্বাচন করতে চায় ইসি

যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ হাজারের বেশি পুরানো সেনা সদস্যের আত্মহত্যা

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ২৪, ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ হাজারের বেশি পুরানো সেনা সদস্যের আত্মহত্যা

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‌‘সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশেষ করে পুরানো সেনা সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ৪৫ হাজারের বেশি পুরানো সেনা সদস্য অথবা ছয় বছরের অভিজ্ঞ সেনা সদস্য আত্মহত্যা করেছে।’

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘তারা এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে।’

এদিকে, বিভিন্ন খবরে জানা গেছে মার্কিন সেনা সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার সামাজিক প্রভাবের বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ওইসব সেনা সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও নজিরবিহীনভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে যতটানা মার্কিন সেনারা প্রাণ হারিয়েছে তার চেয়ে বেশি মারা গেছে আত্মহত্যার মাধ্যমে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্যারল গিয়াকোমো এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ২০ জন মার্কিন সেনা আত্মহত্যা করছে।’

ধারণা করা হচ্ছে, ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে যেসব মার্কিন সেনা অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ গত দুই দশকে মার্কিন সরকারগুলো অযথা বিভিন্ন দেশে যেসব যুদ্ধ শুরু করেছে তা সেনাদের আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।

১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাস নির্মূলের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব যুদ্ধ শুরু করে এবং এ পর্যন্ত বহু মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এ সব যুদ্ধে কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি এবং কতদিন এ যুদ্ধ চলবে তারও কোনো ঠিক ছিল না। ফলে সেনাদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা দেখা দেয়। এসব হতাশা থেকেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। ১১ সেপ্টেম্বরের পর আত্মহত্যার মাত্রা চারগুণে বেড়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, পেন্টাগনের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় মার্কিন সেনাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে যা কিনা গত দুই দশকের ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের প্রভাব। কেননা প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করে তাদেরকে যুদ্ধের দিনগুলো পার করতে হয়েছে।

এ ছাড়া, শুধু আফগানিস্তানের যুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে দুই ট্রিলিয়ন ৪০ হাজার কোটি ডলার। আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার পর গত ২০ বছরের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৪০০ এর বেশি মার্কিন সেনা নিহত এবং আহত হয়েছে আরো হাজার হাজার সেনা।

এরপর ২০০৩ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই মার্কিন সরকার ইরাকে হামলা চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়। ইরাক যুদ্ধে অন্তত ৫০০০ মার্কিন সেনা নিহত এবং আরো হাজার হাজার সেনা আহত হয়েছে। লক্ষ্যহীন ও বিরামহীন এসব যুদ্ধে জড়িয়ে হাজার হাজার মার্কিন সেনা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং এমনকি দেশে ফিরে গিয়েও তারা মানসিক ও পারিবারিক সংকট থেকেও মুক্ত হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এমনসব সংকটের সম্মুখীন তাদেরকে হতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে তাদেরকে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় সব মার্কিন সেনা ৪০ দিনের বেশি সম্মুখ ফ্রন্টে থেকে যুদ্ধ করেছে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে ভুগতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সেনাদের হতাশা ও মানসিক রোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলাকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের অমানবিক আচরণ ও সেনা কমান্ডারদের দুর্ব্যবহার। বিশেষ করে অযথা সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় সাধারণ মানুষের ওপর তারা যে হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা চালিয়েছে পরবর্তীতে এর প্রভাব সেনাদের ওপরও গিয়ে পড়েছে। অর্থাৎ অপরাধবোধ থেকে মানসিক রোগ এবং সেখান থেকে আত্মহত্যার পথে তারা পা বাড়িয়েছে। এসব কারণে পেন্টাগনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ