শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন

বাংলায় আদেশ দিয়েছি, সেটা বুঝতেও কষ্ট হলো? বিচারককে আদালত

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ২০, ২০২২

জাল ডলারের মামলায় আসামিকে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই জামিনে কারামুক্ত হন আসামি জাকিরুল। পরবর্তীকালে হাইকোর্টের দেয়া ওই জামিনাদেশ বাতিল করেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু।

বিষয়টি নজরে এলে তলব করা হয় অধস্তন আদালতের ওই বিচারকককে। উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে ওই বিচারক জামিন বাতিলের বিষয়ে কোন সুদত্তর দিতে পারেননি। পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। হাইকোর্ট নিঃশর্ত ক্ষমার বিষয়টি গ্রহণ করে তাকে ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২০ জুন) এই আদেশ দেন।

ওই বিচারকের উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা তো জামিন আদেশটি বাংলায় লিখেছি। বিদেশি ভাষা ব্যবহার করিনি। আপনি কি এই আদেশের মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্ট যখন জামিন মঞ্জুর করেছেন, তখন আপনি কোন এখতিয়ারে সেই জামিন বাতিল করেন।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ হতে অবৈধ জাল ডলারসহ মো. জাকিরুলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-এ ধারায় দেওয়ানগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।

পরদিন জামিন না-মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠান ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর জেলা জজ আদালতে জামিন চান আসামি। গত ৩ মার্চ জামালপুরের সিনিয়র দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খান আসামির জামিন না-মঞ্জুর করেন।

এরপর আসামি হাইকোর্টে জামিন চান। গত ১০ এপ্রিল বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ আসামির স্থায়ী জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।
ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামি জাকিরুলকে জামিন দেয় আদালত। এই জামিন আদেশ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিলের পর কারাগার থেকে মুক্ত হন আসামি।

পরে মামলাটি বিচারের জন্য জামালপুরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনুর আদালতে যায়। সেখানে নতুন করে জামিন চান আসামি। কিন্তু বিচারক জামিন আবেদন না মঞ্জুরের আদেশ দেন।

স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের জামিন না-মঞ্জুরের আদেশের অনুলিপি হাইকোর্টের নজরে আনেন আসামির আইনজীবী মো. সারওয়ার আলম চৌধুরী। হাইকোর্ট গত ৬ জুন ওই বিচারককে তলব করেন।

তলব আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ যেখানে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন জামিনে আসামিকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। সেখানে বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু কিভাবে আসামির জামিন না-মঞ্জুর করতে পারেন?

তলব আদেশের পর গত ১৫ জুন আসামিকে জামিন দেন ওই বিচারক। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, জামিন না মঞ্জুরের আদেশ রিকল না করে আসামিকে জামিন দেয়াটাও ভুল।

আদালতের এই তলব আদেশে গতকাল সকালে হাইকোর্টে হাজির হন ওই বিচারক। শুরুতেই তার আদেশের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান আদালত। আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে ওই বিচারক বলেন, আমি আদেশটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারিনি। দুঃখ প্রকাশ করছি।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করছি অধস্তন আদালতের অনেক বিচারক হাইকোর্টের আদেশ ঠিকভাবে না পড়েই আদেশ দিচ্ছেন। যদি উচ্চ আদালতের আদেশ বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে জেলা জজশীপের সিনিয়র জজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটাও আপনারা করেন না।

এ পর্যায়ে ওই বিচারক বলেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুল হবে না। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। এরপরই হাইকোর্ট তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে জামিন না-মঞ্জুরের আদেশটি রিকল (প্রত্যাহার) করার নির্দেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আবুল হাশেম এবং আসামি পক্ষে মো. সারওয়ার আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এই আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করায় অধস্তন আদালতের ওই বিচারককে ভর্ৎসনা করেছেন। পরে বিচারক নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ