ঢাকা : নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড ছোটপর্দার অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমককে আগামী তিনমাসের জন্য নিষিদ্ধ করার পর এই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংগঠনটির নেই।
সোমবার (২১ আগস্ট) ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্ত জানার পর এক প্রতিক্রিয়ায় চমক বলেছেন, এই তিন মাস একাধিক নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তিনি।
“ডিরেক্টরস গিল্ড আমাকে নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার রাখে না। আমি তাদের সংগঠনের সদস্যও নই। আমি অভিনয়শিল্পী, আমার সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। ডিরেক্টরস গিল্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি নিয়ে আমি চিন্তিত নই,” বলেন তিনি।
সহশিল্পীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার অভিযোগ’ ও অসদাচরণের কারণে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা ছোটপর্দার অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকের সঙ্গে আগামী তিন মাস কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিরেক্টরস গিল্ড। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ডিরেক্টরস গিল্ড বলেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিনয়শিল্পী রুকাইয়া জাহান চমকের সাথে ডিরেক্টর গিল্ড বাংলাদেশের কোনো সদস্য আগামী ১ সেপ্টম্বর থেকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সব ধরনের নির্মাণকাজ থেকে বিরত থাকবেন।
এছাড়া অভিনেত্রী চমক আগামী ৩০ অগাস্টের মধ্যে নির্মাতার আর্থিক ক্ষতি যা হয়েছে সেটা পরিশোধ করবেন এবং তার করা মিথ্যা জিডি তুলে নেবেন, অন্যথায় গিল্ড নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অনন্ত হিরাসহ অন্যান্য নির্মাতারা।
ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের পর গ্লিটজের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেত্রী চমক। ডিরেক্টরস গিল্ড তিন মাস কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও এই সময়ে অনেকগুলো কাজ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
“এই মাসেও আমি কাজ করছি। আগামি মাসেও আমার কাজের শিডিউল আছে। আশা করছি আগামী মাসেও আমি শুটিং করব। ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য নির্মাতা যারা আছেন, তারা যদি আমাকে নিয়ে কাজ করতে না চান, এটা তাদের ব্যাপার৷ গিল্ডের সদস্য ছাড়াও অনেক নির্মাতা আছেন। আমার হাতে বেশকিছু কাজ রয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত গত গত ৪ অগাস্ট ঢাকার উত্তরার আনন্দবাড়ি শুটিং হাউসে ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের শুটিংয়ে। সেখানে অভিনেত্রী চমকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন নির্মাতা আদিফ হাসান। পরে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অভিযোগ করেন এই নির্মাতা।
নির্মাতা আদিফ হাসান বলেছিলেন, চমকের ‘অপেশাদার’ আচরণের কারণে তিনি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ওই শুটিং সেটে চমকের বিরুদ্ধে অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুমও অশোভন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে তিনি শিল্পী সংঘে চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনার পর সহশিল্পী আরশ খানের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ চাওয়ার অভিযোগ তোলেন চমক। এই অভিযোগগুলো সমাধানে যৌথ উদ্যোগ নেয় টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিপ্যাব।
টেলিপ্যাবের সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠানের সভাপতিত্বে ১৩ অগাস্ট বিচার সভা হয়। সেখানে প্রথমে সবার অভিযোগ পাঠ করা হয় এবং চমক ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বক্তব্য শোনা হয়। পরে ঘটনার সাক্ষীদেরও বক্তব্য শোনেন সংগঠনের নেতারা।
এর একদিন পর সভার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে জানায় অভিনয়শিল্পী সংঘ। সহশিল্পীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার’ যে অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক, সেটি ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়। সহশিল্পী আরশ খানের বিরুদ্ধে থানায় করা জিডি প্রত্যাহার, ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা করা হয় চমকের বিরুদ্ধে।
ডিরেক্টরস গিল্ড সেই সিদ্ধান্ত ‘যথেষ্ট নয়’ জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং চমককে নিষিদ্ধের দাবি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে চমককে নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড।