শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার ৪৭ শতাংশ নারী

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ৩, ২০২২

ঢাকায় গণপরিবহনে চলাচল করা কিশোরী, তরুণী ও নারীদের ৬৩ শতাংশ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হন। যৌন হয়রানির শিকার এই নারীদের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক (৪৫ শতাংশ) পরবর্তী সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি: কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ শিরোনামের এক জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (৩ জুন) ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকার বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি , বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারী ও কিছুসংখ্যক গৃহবধূর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।

জরিপে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০৫ নারী অংশ নেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। জরিপ শুরুর সময়ের ছয় মাস আগপর্যন্ত হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন এমন নারীদের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। অফলাইন ও অনলাইনে জরিপ করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। জরিপটি পরিচালনা করা হয় এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন হয়রানির পাশাপাশি ১৫ শতাংশ বুলিং, ১৫ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৫ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য এবং ৮ শতাংশ শারীরিক গঠন নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারা যৌন নিপীড়ন করেছে জানতে চাইলে জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁরা অন্য যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০ শতাংশ চালকের সহকারী , ৩ শতাংশ হকার এবং ২ শতাংশ চালকের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রায় ৬২ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানিয়েছেন, ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, কিশোর ও যুবক অর্থাৎ ১৩ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারী যাত্রী ওঠানো-নামানোর সময় চালকের সহকারীদের নেমে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও তাঁরা বাসের দরজায় অবস্থান করে অযাচিতভাবে স্পর্শ করে বলে অভিযোগে এসেছে। প্রায় ৬১ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, ওঠা-নামার সময় সহকারীরা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে স্পর্শ করেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, ৬ মাসে অন্তত ৩ বার তাঁদের এ ধরনের স্পর্শের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

গণপরিবহনে কোন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার বেশি হয়েছেন, তা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩১ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানিয়েছেন, গণপরিবহনে অনেক সময় ফাঁকা জায়গা থাকলেও অন্য যাত্রীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ইচ্ছাকৃতভাবে হালকাভাবে স্পর্শের শিকার হয়েছেন ১৮ শতাংশ। ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কার শিকার হয়েছেন ১৪ শতাংশ। প্রায় ১৪ শতাংশ কিশোরী-তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। হালকা ভিড়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ এবং অতিরিক্ত ভিড়ে ২৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ নারীই প্রতিবাদ করেননি।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। আর জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার।

গণপরিবহনে হয়রানি প্রতিরোধে ১০ দফা প্রস্তাব করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে- পরিবহনে আসনের বেশি যাত্রী না তোলা, গণপরিবহনের ভেতর ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, নারীদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা, বাসের চালক, তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারীর পরিচয় উল্লেখ করে নেমপ্লেট বাধ্যতামূলক করা, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া ইত্যাদি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ