দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী ও এর আশেপাশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে তাই দূষণ বন্ধ করতেই হবে। এই নদীর পানি এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে মানুষ এতে গোসল করতে পারে। একইসাথে এই নদীর পরিবেশগত ভারসম্য রক্ষা করতে হবে।
রবিবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দূষণমুক্ত নদীর দাবিতে ‘বুড়িগঙ্গায় গণগোসল’ নামে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনে অংশ নিয়ে নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ, পরিবেশকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, যুব নেতৃবৃন্দ এমন কথা বলেন।
বুড়িগঙ্গার পানিকে গোসলের উপযোগী করা, দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং বুড়িগঙ্গার নদী দূষণের শিকার ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘বুড়িগঙ্গায় গণগোসল’-এর আয়োজন করে জেসিআই ঢাকা নর্থ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা ও রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজের নিচের খেয়াঘাটে। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করে আয়োজকরা। এরপর বুড়িগঙ্গায় গণগোসলে অংশ নেন অংশগ্রহণকারীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজনের একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা দেন ‘বুড়িগঙ্গায় গণগোসল’-এর সমন্বয়ক মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকা শহরের ত্রাণকর্তা। এই নদীর তীরে ৫২ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করে, যারা দূষণে জর্জরিত পানির কারণে অর্থনৈতিক, শারীরিকসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে মধ্য দিয়ে আমরা বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধ ও এই নদীর পানি গোসলের উপযোগী করতে সবাইকে উৎসাহিত করতে চাই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘ঢাকা শহরের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে পরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শহরের যতই উন্নয়ন হয়েছে, ততই বুড়িগঙ্গার অবস্থা খারাপ হয়েছে। ফলে নদী তার সৌন্দর্য হারিয়ে এখন দূষণে জর্জরিত। বুড়িগঙ্গাকে বাঁবাতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর গুরুত্ব তুলে ধরে রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, গৃহস্থালির বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, পয়োনিষ্কাশন, মৃত প্রাণী, প্লাস্টিক ও তেল বুড়িগঙ্গাকে প্রতিনিয়তই দূষণ করে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বুড়িগঙ্গা নদী কার্যত প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ঢাকাকে বাঁচানের জন্যই।’
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর বসিলা ব্রিজের নিচের খেয়াঘাটে গণগোসলে অংশগ্রহণ করেন অংশগ্রহণকরারী। বুড়িগঙ্গার পানিতে গোসল করার পাশাপাশি ব্যানারে, প্লাকার্ডে নদী বাঁচানোর বিভিন্ন বর্তা তুলে ধরেন তারা।
গণগোসলের সময় বছিলা এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘একসময় নদীতে মাছ পাওয়া যেত, পানিতে দূষণ চিল না। নদীতে স্নান করতাম আমরা । কিন্তু সেসব এখন দূর অতীতের বিষয়। দূষণের কারনে আমাদের জীবন, জীবিকার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। আমরা চাই বুড়িগঙ্গা বাঁচুক।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেন ও বুড়িঙ্গা বাচাঁতে কথা বলেন, নদী মোর্চার সদস্য এ্যাডভোকেট ইবনুল সাইদ রানা, নোঙ্গর-এর সভাপতি সুমন শামস্, -সবুজপাতার সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ আহমেদ, রিভার বাংলা’র সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, জেসিআই ঢাকা নর্থ-এর প্রেসিডেন্ট সাখাওয়াত হোসেন, গ্রীন সেভার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি, ইএমকে সেন্টারের এডুকেশন উপদেষ্টা রাজন সিদ্দিকী তুহিন, যুব বাপার সেক্রেটারী রওমান স্মিতাসহ আরো অনেকে।
এই আয়োজনে অংশীদার হিসেবে ছিল বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ গবেষণা কেন্দ্র, ক্যাচ বাংলাদেশ, গ্রীণ সেভার্স, কানেক্ট ৩৬০, সবুজপাতা, রিভার বাংলা, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেন্ডেশন, নদীযাত্রিক, নদীটিভি, বুড়িগঙ্গা রিভার কোয়ালিশন, জেনল্যাব ও ঢাকা ইয়্যুথ ক্লাব।