রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন

ওয়াসার এমডি’র ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বিএফআইইউ

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০২২

ওয়াসার এমডির তাসকিন এ খানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী ২৯ তারিখের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে এই হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বেতন-ভাতা, উৎসাহ ভাতা, আনুষঙ্গিক সুবিধা হিসেবে যত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২ মাসের মধ্যে এ হিসাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গত ১৭ আগস্ট বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

শুনানিকালে এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, এ যেন এক দেশে দুই নীতি। সরকারি সিদ্ধান্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তা সত্ত্বেও ঢাকা ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড এমডির বেতন-ভাতা দফায় দফায় বৃদ্ধি করে।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। শুনানিতে সরকারি সিদ্ধান্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন আদালতে উপস্থাপন করেন এই আইনজীবী।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার পর ওয়াসা এমডির নিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সিদ্ধান্তের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন আদালত। এ সময় আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এ যেন এক দেশে দুই নীতি।

রুলে ওয়াসার এমডিকে অপসারণ করতে বিবাদীদের (রিট মামলার বিবাদী) নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশ (ক্যাব) এ রিট করে।

এছাড়া জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ওয়াসার এমডির বেতন-ভাতা কেন নির্ধারণ করা হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড ও ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে রুলের জবাব দিতে বলেছে হাইকোর্ট।

২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে রয়েছেন তাকসিম এ খান। প্রথম নিয়োগের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ বার তার নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ওয়াসার এই শীর্ষ কর্মকর্তা আলোচিত-সমালোচিত। বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেও তিনি সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। ঢাকায় অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পানের অনুপযুক্ত হলেও তিনি দাবি করেন ওয়াসার সরবরাহ করা পানি সুপেয় এবং তিনি সেটি না ফুটিয়েই পান করেন। পরে সমাজকর্মীরা তাকে পূর্ব জুরাইন এলাকায় সরবরাহ করা ওয়াসার পানির শরবত খাওয়াতে আসেন ওয়াসা ভবনে। কিন্তু তিনি সেদিন দেখা দেননি। সম্প্রতি ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন সরকারের কাছে।

তিনি জানান, ওয়াসা এখনও ভিক্ষা করে বা সরকারের ভর্তুকিতে চলে। তাই পানির দাম বৃদ্ধি করে সেই ভর্তুকি কমাতে চান। এরই মধ্যে আবার তিনি নিজের বেতন বাড়ানোর কথা বলেন বোর্ডকে।

রিট মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭২তম সভায় এমডি তাকসিম এ খানের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন হয়। পরে কমিটি এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব করে। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ২ লাখ ৮৬ হাজার, উৎসব ভাতা ৪৭ হাজার ৬৬৭, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০, বিশেষ ভাতা ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৬ ও বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে গত মার্চে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস দেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এতে সাড়া না পাওয়ায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১ জুলাই বা তারপর যারা সরকারি, স্বশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানসহ প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন বেসামরিক পদে জনস্বার্থে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের বিধান কার্যকর হবে। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্র্তৃপক্ষ আইন-১৯৯৬ সালের ২৮(৪) উপধারা অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের এখতিয়ার আছে, তার বেতন ও অন্যান্য ভাতা নির্ধারণ করার। কিন্তু এর জন্য কোনো নীতিমালা নেই। সে ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে বিজ্ঞপ্তি সে অনুযায়ী তাকসিম এ খানের বেতন-ভাতা নির্ধারণ হওয়া উচিত। কিন্তু সেটি হয়নি। অথচ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াসা বোর্ড তার বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেছে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন পৌনে ৩ লাখ টাকার বেশি। ২০১৫ সালের যে বেতন স্কেল তাতে তার সর্বোচ্চ মূল বেতন হওয়ার কথা ৭৮ হাজার টাকা।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, ‘এ বেতন বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। ওয়াসা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো গণ্য করে এ ধরনের সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। তাকে অপসারণের ক্ষেত্রে বোর্ডের যে নিষ্ক্রিয়তা সেটি আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। এছাড়া গত ১৩ বছরে তিনি (তাকসিম এ খান) কী পরিমাণ বেতন ও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন সে হিসাব দিতে নির্দেশনা চেয়েছিলাম। আদালত আমাদের আরজি গ্রহণ করে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ