শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

চালের সিণ্ডিকেট ও মজুতদারদের গ্রেফতারের দাবি

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০২২

চালের সিণ্ডিকেট, মজুতদার ও বাজার অস্থিতিশীলকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে সাধারণ নাগরিক সমাজ । রবিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানান সংগঠনের বক্তারা।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, মুষ্টিমেয় কতিপয় সিন্ডিকেটকারীরা দৈনিক ৪০ কোটি যা মাসে ১২০০ কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। সরকার তাদেরকে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? তা আমাদের কাছে বৌধগম্য নয়। সাধারণ নাগরিকরা ভাত মরিচ দিয়ে খাবে, সেটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে চালের অতিমূল্যের কারনে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট মজুতের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। ফলে তৈরি হচ্ছে চালের সংকট। তাদের অতি মুনাফা ও মুজত, বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আর এই সিন্ডিকেট ও মুনাফাখোরদের কারণে অস্থির হয়ে উঠছে খুচরা ব্যবসায়ীসহ সাধারণ ক্রেতারা।

আমরা বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম খান কে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাজার কার দখলে। তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে তিনি এ দায় এড়াতে পারেন না। সরকারকে আমরা বলতে চাই বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো চালব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকে আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। তাদেরকে দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গত সপ্তাহে প্রতিযোগিতা কমিশনের একটি মিটিংয়ে আমরা জানতে পারি চালমিল মালিক আব্দুর রশিদ একাই দেশের ৩০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, সেই সাথে অটো হাসকি মিল এর সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি একাই। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, সাগর অটো রাইস মিল, কিবরিয়া বাহার, প্রধান এগ্রো, নজরুল অটোমেটিক রাইস মিল, বুশরা অটোমেটিক রাইস মিল, বুশ অটোমেটিক রাইস মিল, ইসলাম এগ্রো এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ হাকিমপুর রাইস, শামসুল অটো, সাদিয়া ফুড, তৌফিকুল ইসলাম বাবু, বেল্লালসহ আরো কয়েকটি হাতে গোনা প্রতিষ্ঠান পুরো বাজার নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয় এ সকল তথ্য জানা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি এদের মিলগুলিতে মোবাইল কোর্টও আজ পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়নি।

এছাড়াও বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের ১০টি গুদামে কয়েক হাজার বস্তা ধান ও চাল মজুত রয়েছে। একইভাবে ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, হিটলার হোসেন, হাশেম আলী, আমিনুল ইসলাম মিন্টু, আলামিন হোসেন, গোলাম রব্বানী, প্রদীপ সাহা, কানাই শাহ, গৌর শাহ, জাকির হোসেন ও সঞ্জয় দেসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর গোডাউনে রয়েছে হাজার হাজার বস্তা ধান-চাল।

উপজেলার আলাল গ্রুপের অটো রাইস মিল, উত্তরবঙ্গ অটো রাইস মিল, শিনু অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেডের অটো রাইস মিল ও মজুমদার অটো রাইস মিলেও কয়েক হাজার বস্তা ধান ও চালের মজুত রয়েছে বলে জানা গেছে।

মজুত ও চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজেই বলেছেন, সরকারি নিয়ম মতে মিল মালিকরা ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুত করে রাখতে পারবেন না। তাহলে যারা অবৈধভাবে ধান-চাল মজুত করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন আমরা তা জানতে চাই। সেই সাথে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। গত পরশু শিল্প মন্ত্রী নিজেও বলেছেন ব্যবসায়ীদের সিণ্ডিকেটের কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত উৎপাদন রয়েছে। সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। নিজে আমদানি করেছেন এবং বেসরকারী উদ্যোগেও আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু অনেক চাল ব্যবসায়ী আমদানির অনুমতি পেয়েও আমদানি করেননি। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি। সমাবেশে বক্তারা প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

জ্বালানী তেলের দামবৃদ্ধির অজুহাতে পরিবহন খরচের দোহাই নিয়ে সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়ালেও তার সঠিক পরিসংখ্যান নাই। তবে বিভিন্ন স্থানে দূরত্ব অনুসারে পরিবহন খরচের হিসাব মিলেছে নগণ্য। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর দিনাজপুর থেকে ২৫০ বস্তা (১৭ হাজার ৫০০ কেজি) চাল নিয়ে একটি ট্রাক ঢাকা গেলে ভাড়া গুনতে হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি বস্তায় (৭০ কেজি) লেবার খরচ ও আড়তদারি মিলে আরও ১৪ টাকা যোগ হয়। খরচ যোগ করে কেজিপ্রতি চালে খরচ হয় ১ টাকা ২২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৪ পয়সা। অথচ ওই সিন্ডিকেট প্রতি কেজি মোটা চালসহ অন্যান্য চালের দাম ৫-১০ টাকা বাড়িয়েছে, যা মোট খরচের ১২ গুণেরও বেশি।

চালের বাজারদর দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার এন এ মার্কেটে পাইকারি প্রতি বস্তা বিআর-২৮ বিক্রি হয় দুই হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার ৯৫০ টাকা। প্রতি বস্তা বিআর-২৯ বিক্রি হয় দুই হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৮৫০ টাকা, মিনিকেট প্রতি বস্তা তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৪৫০, গুটিস্বর্ণা প্রতি বস্তা দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫৫০, বাসমতি প্রতি বস্তা তিন হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ৯৫০, নাজিরশাইল তিন হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ৯৫০ ও সুমন-স্বর্ণা প্রতি বস্তা দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। একইভাবে বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭২, গুটিস্বর্ণা ৫২-৫৩, বাসমতি ৮০-৮২, নাজিরশাইল ৮০-৮২ ও সুমন-স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর প্রতি বস্তা চালে দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিআর-২৮ চাল প্রতি বস্তা বেড়েছে সাড়ে ৩শত টাকা।এ ক্ষেত্রে মজুতদাররা মোটা অংকের লাভ করছে।

আমাদের দাবি সারাদেশের চালকল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে অটো রাইস মিলার্স এসোসিয়েশনকে একটি নীতিমালার মধ্যে এনে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাজার অস্থিতিশীলকারীদের তালিকা অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

মানববন্ধনে এনপিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুর রহমান দেওয়ান, লেবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, গণ সংহতি আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলহাস নাইম, ক্যাবের প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন, নারী আন্দোলনের সভানেত্রী মিতা রহমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ