আফগানিস্তানে আফিম ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং খনিজ সম্পদ আহরণ থেকে তালেবান গোষ্ঠীর বার্ষিক আয় প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার। কেবল আফিম থেকেই বছরে আয় প্রায় ৪৬ কোটি ডলার। ইউরোপের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগ হেরোইন যোগানদাতাও এই দেশটি। পপি অর্থনীতি বন্ধে তালেবান জোড়ালো ঘোষণা দিলেও বিশ্লেষক বলছেন এসব ফাঁকা বুলি।
৬ লাখ ৫২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের আফগানিস্তানে বেশিরভাগ মানুষই জড়িত কৃষিকাজে। গত বছর দেশটির ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে চলে পপির চাষাবাদ। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৭ ভাগ বেশি।
কথিত আছে, কৃষকদের দিয়ে জোর করেই আফিম চাষ করায় তালেবান। কৃষক আর ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চলে কর আদায়। পরিসংখ্যান বলছে, বৈশ্বিক হেরোইন চাহিদার ৮০ থেকে ৯০ ভাগের যোগানদাতা আফগানিস্তান। কেবল ইউরোপের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগ হেরোইন যোগানদাতাও এই দেশটি। মাদক ব্যবসায় রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় তুরস্ক ও বলকান দেশগুলোকে।
আফগানে ৮শ খনিরও অর্ধেকেই তালেবান নিয়ন্ত্রণে। আর সরকার নিয়ন্ত্রিত খনি থেকেও চাদা আদায় করতো ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠীটি। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নিকেল, টাংস্টেন, সোনা, মূল্যবান পাথর ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন থেকে, তালেবানের আয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
তালেবানের অর্থের উৎস:
বার্ষিক আয়-৩০ কোটি থেকে ১ হাজার ৬শ কোটি মার্কিন ডলার
আফিম থেকে আয়- ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার
খনিজ সম্পদ থেকে আয়- ৪৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার
তথ্যসূত্র: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নথি বলছে, ২০১৮ সালে তালেবানের আনুমানিক সম্পদ ছিলো ৮০ কোটি ডলার। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, গত বছর ঐ সম্পদ বেড়ে দাড়ায়, দেড়শ কোটি মার্কিন ডলারে। সপ্তাহখানেক আগে আফগান নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর, পপি অর্থনীতি বন্ধে তালেবান জোড়ালো ঘোষণা দিলেও, বিশ্লেষক বলছেন, এসব ফাঁকা বুলি।
উগ্রবাদ বিরোধী প্রকল্প পরিচালক হানস জ্যাকব শিন্দলার বলেন, তালেবান যতই বলুক তারা আদতে মাদক চাষ আর বানিজ্য বন্ধ করবে না। তাদের উত্থানই হলো এ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে এ বাণিজ্য ছাড়া তাদের বিকল্প নেই।
আফগানিস্তানে মাদক বাণিজ্য বন্ধে এ পর্যন্ত ৮শ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অধিক লাভের আশায় গম, জাফরানের পরিবর্তে হেরোইন আর আফিম চাষেই বেশি উৎসাহী এ জনপদের ৬০ ভাগ কৃষক।