কোনও খাদ্যজাত পণ্যের ওপর হঠাৎ করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দেশ খাদ্য সংকটে রয়েছে। আকস্মিক খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধের ফলে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই খাদ্যজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে তা যেন আগেই আমদানিকারক দেশকে অবহিত করা হয়।
রোববার (১২ জুন) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের প্রথম দিনের বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর যেন হঠাৎ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা হয়। এটি বন্ধ করতে হলে আমদানিকারক দেশকে অব্যশই নির্দিষ্ট সময়ের আগে তা জানাতে হবে।
আজ থেকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউটিও’র সদরদপ্তরে সংস্থাটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তপন কান্তি ঘোষ আরও জানান, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পরও বাংলাদেশসহ অন্যান্য এলডিসি দেশ শুল্কমুক্ত যেসব বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে, সেটা যেন আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর আর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যাবে না। তাই এলডিসির পক্ষ থেকে ডব্লিউটিওতে দেয়া শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, মৎস্যখাতে ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, উন্নয়নশীল দেশের মৎস্যখাতের দজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য এই খাতে ভর্তুকি দেয়াটা জরুরি।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বৈঠকে দেয়া তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ জীবিকার জন্য মৎস্যখাতে জড়িত। তাই স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা টিকিয়ে রাখার জন্য মৎস্যখাতে ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাসে এলডিসিভুক্ত দেশকে সরকারি পর্যায়ে বড় আকারে খাদ্য মুজদ করার মতো সুযোগ রাখার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কৃষিসহ ডব্লিউটিও’র অন্যান্য যেকোনও সংস্কার যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় আমরা সেটিও বলেছি। সংস্কার অব্যশই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ হতে হবে, যেখানে সবার মতামত যেন থাকে। প্রতিটি সদস্যের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে, সম্মেলনের প্রথম দিনে ডব্লিউটিও’র মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো আইওয়ালা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ইউক্রেন থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টন খাদ্যশস্য আনা যায়নি। আবার গত মাসে আরও ২৫ টন খাদ্যশস্য ইউক্রেন রপ্তানি না করতে পারায় মজুদ করতে বাধ্য হয়েছে।
এনগোজি ওকোনজো এলডিসি উত্তোরণের পরবর্তীতে চলমান বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হঠাৎ করে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ না করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সদস্যগুলোকে ঐক্যমতে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।