নিত্যপণ্যের চড়া দাম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বাচ্ছন্দে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাল সংসদে উঠছে জাতীয় বাজেট। নতুন এই বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটের তুলনায় সোয়া ১৪ শতাংশ বড় বাজেট দিয়ে সংকটে পড়া অর্থনীতি চাঙা করতে চান অর্থমন্ত্রী। তার পরিকল্পনায় জনসাধারণের জন্য তেমন সুখবর না থাকলেও ব্যবসায়ীদের জন্য থাকছে নানামুখী ছাড়। ফ্ল্যাট কেনায় বা পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ তুলে দিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনতে দেয়া হতে পারে বিশেষ সুযোগ।
মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা, যার প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। নিত্যপণ্যের উর্দ্ধমুখী দামের সংকটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের অসহনীয় মূল্যস্ফীতির সেই চাপ থেকে সুরক্ষায় বাজেট তাই ঢেলে সাজাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তার বাজেট পরিকল্পনার বড় অংশ পরিবহন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে ঘিরে। ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে বিদ্যুৎ-গ্যাস, সার এবং খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ছে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সেও যাচ্ছে প্রণোদনা। সবমিলিযে ভর্তুকি প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
সংকটের মধ্যেও বড় আশা নিয়ে এনবিআরকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের টার্গেট দিচ্ছে সরকার। বসানো হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট, টিভি-ফ্রিজ-এসির মতো আমদানি পণ্যে কর। উৎসে কর দ্বিগুণ বাড়ছে রপ্তানিকারকদের। আয় বাড়াতে লাখোপতিদের ব্যাংক হিসাবে নজর দিচ্ছে সরকার।
সামাজিক সুরক্ষার পরিধি পাশাপাশি বাজেটে বাড়ছে প্রতিবন্ধি ভাতা। কমতে পারে কর্পোরেট কর। ভ্যাট-ট্যাক্স কমতে পারে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়। রেস্ট্যুরেন্টের বিলে কমবে ভ্যাটের ভার। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত সীমা বহাল থাকছে আগের তিন লাখেই। তবে, নতুন করে ঘোষণা আসতে পারে সবার জন্য পেনশন কর্মসূচির।
এবার বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা ধার করবে সরকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে তোলা হবে ৩৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা।
এ পর্যন্ত দেশে ১৩ জন অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন মোট ৫২টি বাজেট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ বার করে বাজেট দেন প্রয়াত দুই অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল দিতে যাচ্ছেন তার চতুর্থ বাজেট।
১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথমবার যে বাজেট দেন তার পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৫২ কোটি টাকার। আর এবার যে বাজেট আসছে তা প্রথম বাজেটের তুলনায় ৯০১ গুণ বড়।