স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে তা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে গেছে। সংক্রমণ গ্রামের লোকজনের মধ্যে বেশি হচ্ছে। আমাদের কাছে যে হিসাব আছে, তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ৫০ শতাংশের বেশি রোগী গ্রাম থেকে আসছে।”
ডা. খুরশীদ আলম বলেন, বর্ষা মৌসুম চলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলেও মানুষ একে জ্বর, সর্দি-কাশি ভাবছেন। সে কারণে হাসপাতালে আসছে কম। সময়মত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
“আমরা সবগুলো উপজেলায় কথা বলেছি। সবার পর্যবেক্ষণ একটাই, রোগীদের অনেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৪০-৫০ এ নেমে গেলে হাসপাতালে আসছেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে ব্রেইন ড্যামেজ আগেই হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের বাঁচানো খুব কঠিন হয়। গ্রামের রোগীরা অসতর্ক, গ্রামের বয়স্ক মানুষ হাসপাতালে আসেন অনেক পরে, এ কারণে মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে।
এপ্রিল প্রথম দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এপ্রিলের পর থেকেই করোনাভাইরাসের বিস্তার দ্রুত বাড়তে থাকে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইডিসিআর রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জুন মাসে দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশই ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত।
এর আগের মে মাসে সংগৃহীত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ৪৫ শতাংশে ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের এ ধরনটি পাওয়া গিয়েছিল।
দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। রোববার সরকারের এক আদেশে এসব বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৪ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে।
লকডাউন শুরুর আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরের চার দিনের মধ্যে তিন দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল আট আজারের ওপরে। রোববার পর্যন্ত দেশে সব মিলিয়ে মোট ৯ লাখ ৪৪ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
আর ২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই, এই আট দিনে করোনাভাইরাসে মোট ১০১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হাজারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে রোববার।
রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি খুলনা ও রাজশাহীতে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ঢাকার চেয়েও খুলনা বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকছে গত কয়েক দিন ধরে।
রোববার দেশে রেকর্ড ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যাদের এক তৃতীয়াংশই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা।