আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে পদ্মাসেতু। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করবেন। কিন্তু এই পদ্মাসেতু তৈরি করতে গিয়ে অনেক কাঠখোড় পোহাতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। আর সেই গল্প বলতে গিয়েই কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রাজনীতির সাতকাহন’-এর ৫ম পর্বে উপস্থিত হয়ে পদ্মাসেতুর গল্প বলতে গিয়ে কাঁদেন ড. মসিউর রহমান। শুক্রবার (২৭ মে) রাত ৯টায় ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
এতে ‘পদ্মাসেতুর নেপথ্য কথা’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আমিন।
২০১১-১২ সালে বিশ্বব্যাংক কীভাবে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছিল সে সম্পর্কে কথাবার্তা বলেন ড. মসিউর রহমান। কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, কেবল ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাদে অন্য যারা এখানে অর্থায়ন করেছে; বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকা, এরা একদিন সকালে সময় ঠিক করে আমার সাথে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল জাপানি অ্যাম্বাসি অফিসে। আমি বললাম সেখানে আমি যাব না। আমার যে যুক্তি ছিল যে মানুষের ধারণা হবে বা প্রচার হবে আমি তাদের কাছে নত হয়ে কোনো সুবিধা চাচ্ছি। আমি বললাম, তোমরা আমাদের এখানে আসো। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল তোমার ওখানে গেলে জার্নালিস্টদের ফেস করতে হবে। আমি বললাম, জার্নালিস্টদের আমি ফেস করব। ওরা এসে আমাকে যেটা বলল, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো, তারা আমাকে বিদেশে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বা কোথাও আমাকে একটা কনসালটেন্সি জোগাড় করে দেবে এবং আমি যে বেতন চাই সে বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেয়ার বন্দোবস্ত করবে। আমার উত্তর হলো, দেখ আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছে, এখানেই তো টাকা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, ওদের যে প্রস্তাব তা একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে দোষ করেছে, তাকে আবার পুরস্কৃত করবে। এর পেছনে যে বুদ্ধি তাদের থাকতে পারে, সেটা হলো আমি যে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম, আমার এই শক্ত পজিশন নেয়ার ক্ষমতাটা কোথা থেকে আসলো।
ড. মসিউর রহমান আরও বলেন, তার আগে একটু বলি, মাঝখানে যে বিশ্বব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দুয়েকজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছেন, তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড়ো না কেন। আমি বললাম, দেখ আমি দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। আমার ক্ষমতা ততদিন, যত সময় আমি দেশের মধ্যে আছি। আরেকটি হলো প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস যুগিয়েছেন।’ এটুকু বলেই কেঁদে ফেলেন ড. মসিউর রহমান।