মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গতকাল রোববার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ বছর নয়টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের এসএসসি। সকাল ১০টা থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে।
এসএসসি-সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে নয়টি শিক্ষা বোর্ডে সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। অসাধু কাজের জন্য বরিশাল বোর্ডের ১ শিক্ষার্থী ও ২ কক্ষ পরিদর্শক এবং দিনাজপুর বোর্ডের ১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিত ছিলেন ১০ হাজার এবং বহিষ্কার করা হয় ১০ জনকে। এছাড়া কারিগরিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গতকাল নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৬ জন। সে হিসেবে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৮জন।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, প্রথম দিনের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক পরিসংখ্যান দেখে বলা যায়, প্রথম দিন সর্বোচ্চ সংখ্যাক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ৪২৩টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০৭ জন অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও এদিন ১ লাখ ২৭ হাজার ৯২৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রথম দিনের পরীক্ষায় ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২০৪টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৩৩৭ জনের মধ্যে ২৮ হাজার ১৪৩ জন উপস্থিত ছিল। এদিন ১৯৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ২৬৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৭৯ হাজার ৮৮৬ জনের মধ্যে ৭৯ হাজার ৪২৩ জন উপস্থিত ছিল। এদিন ৪৬৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ১৭৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৬১৭ জনের মধ্যে ২৩ হাজার ৪৪৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ১৭২ জন পরীক্ষার্থী কেন্দ্র উপস্থিত হয়নি। আর ২ জন কক্ষ পরিদর্শককে বহিস্কার করা হয়। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ১৪৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৮৭৩ জনের মধ্যে ১৯ হাজার ৭২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ১৪৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ২৭৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৭৭ হাজার ৯১২ জনের মধ্যে ৭৭ হাজার ৩১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ৫৯৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ২৬৮টি কেন্দ্রে ৫৩ হাজার ৩৭৮ জনের মধ্যে ৫২ হাজার ৭৭১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ৬০৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ১৪৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৪০ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে ৩৯ হাজার ৮৮৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ৩১২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। যশোর শিক্ষা বোর্ডের ২৯১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ২৬ জনের মধ্যে ৩৫ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এদিন ১৭১ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এছাড়াও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭৭ জন। মোট ৯ হাজার ৮৯৪ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিতির হার ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ।
এদিন অসাধুপন্থা অবলম্বন করায় ১০ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর করোনা মহামারির কারণে এই পাবলিক পরীক্ষা নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুুল, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। নয়টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। আর ৯ হাজার ১১০টি মাদ্রাসার ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭জন পরীক্ষার্থী। এদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৬ জন। মোট অনুপস্থিত ৫ হাজার ৩৭৮ পরীক্ষার্থী।
চলতি বছর ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি। এবছর দেশের বাইরে এ বছর নয়টি কেন্দ্র- জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলি, দোহা, আবুধাবি, দুবাই, বাহরাইন, ওমানের সাহাম ও গ্রিসের এথেন্সে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা থেকে শুরুর সময় পিছিয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১৪ নভেম্বর। আর ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে মে-জুন মাসে। গতকাল রাজধানীতে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি জানান, ২০২২ সালে নির্ধারিত সময়ে (ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। মে-জুন মাসে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের পরীক্ষা আগের মতো তারিখে (ফেব্রুয়ারি) নিতে পারবো না। তবে এবার যত দেরি হয়েছে, আগামীতে তত দেরি হবে না। করোনা যতটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেটা যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে সামনের বছর এত দেরি হবে না। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে নেয়া সম্ভব বোধহয় হবে না। শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সম্পন্ন করার তো একটা সময় দিতে হবে।
বছরের মে-জুন এই রকম সময়ে হয়তো চলে যেতে পারে। আশা করি, তার আগেই আমরা করে ফেলতে পারবো। নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একমাসের মধ্যে এসএসসির ফল দেয়ার চেষ্টা করা হবে। প্রতি বছর পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হতো। এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সে কারণে এবার একমাসের মধ্যেই পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সাব কমিটি।