# বুয়েটের হল খুলছে ১০ নভেম্বর, ক্লাস ১৩ নভেম্বর থেকে # চবির ডি-ইউনিট পরীক্ষায় অনুপস্থিত ১৮৭৫০ # মোটা শিশু ভর্তি না নেয়ার শর্ত দুঃখজনক: শিক্ষামন্ত্রী # বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টারে ভর্তি নেয়ার কৌশল আইনের ব্যত্যয় মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমে যাওয়া দীর্ঘ দেড় বছর পর খুলে দেয়া হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে ফের সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের স্বাস্থ্যবিদরা। খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে চলতি বছরও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ইতোমধ্যেই স্কুলে ভর্তি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ ব্যাপারে সভা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হতে পাওে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তবে লটারির মাধ্যমে ভর্তির পক্ষে নন রাজধানীর শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন শিক্ষাবর্ষ সামনে রেখে চলতি মাস থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো। অনেকে ব্যানার-ফেস্টুনে ভর্তির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছে। তবে রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম বিতরণ হবে ডিসেম্বরের শুরুতে এবং মাসের শেষ দিকে লটারি বা ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। আবেদন কার্যক্রম চলবে অনলাইনে। সাধারণত প্রতি বছর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। মাউশি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মতো এবারো ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করতে নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা করে ২০২২ সালের স্কুল ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। গত বছর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন হয়।
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি করতে প্রস্তাব দেয়া হবে। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে আগামী বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি লটারিতে করা হবে।
এদিকে মাধ্যমিকে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন্নাহার।
তিনি বলেন, লটারির মাধ্যমে সব ক্লাসে ভর্তি করা হলে শিক্ষার্থী বাছাই করে নেয়া সম্ভব হয় না। অনেকে লটারিতে ভর্তি হলে পরে টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারে না। যেহেতু শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয় ও বেতন-ভাতা দেয়া হয়। তাই কেউ যদি পাওনা পরিশোধ না করে তাহলে প্রতিষ্ঠানে সংকট তৈরি হয়। তবে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হলে তদবির কিংবা অন্য চাপ থাকে না।
এদিকে মহামারীতে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী ১৩ নভেম্বর বুয়েটে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে, তার আগে ১০ নভেম্বর খুলবে হলগুলো। শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নেয়ার শর্তে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২০-২১ সেশনের স্নাতক প্রথমবর্ষের ডি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ডি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। ডি-ইউনিটে ৫৪ হাজার ২৫২ জন ভর্তি আবেদনকারীর মধ্যে অংশ নিয়েছেন ৩৫ হাজার ৫০২ জন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অনুপস্থিত ছিলেন ১৮ হাজার ৭৫০ জন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকবে কিন্তু সেটা যেন বোঝা না হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতিতে ফেলা যাবে না। মূল্যায়ন হবে, তবে সেটা যেন প্রতিযোগিতা না হয়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময়ে তিনি মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরির স্কুলে ‘মোটা শিশু’ ভর্তি না নেয়ার বিষয়ে বলেন, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ওজন ও উচ্চতা নির্ধারণ কাম্য নয়। এটি আমার জানা ছিল না। আমরা কোনো অসম প্রতিযোগিতা যেন না হয় তাই লটারির মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলাম। এ ছাড়াও রোল নম্বর ধরে যেন ডাকা না লাগে তাই ইউনিক আইডির ব্যবস্থা করছি।
এদিকে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই সেমিস্টারে ভর্তি করানোর নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এখতিয়ার নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি, উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়াতে এ আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ‘ইউনিক স্টুডেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার’ ম্যানুয়াল তৈরির জন্য গত ৯ আগস্টের চিঠিতে বলা হয়, কোনোক্রমেই ২০২১ সালের পর বছরে দুই সেমিস্টার ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্দেশনার পর ইউজিসির পক্ষ থেকে আবার বলা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে দুই সেমিস্টার চালু হবে।
ইউজিসির এই নির্দেশনাকে অপকৌশল উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। অ্যাকাডেমিক বিষয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হতো। তা না করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ইউজিসির এক ধরনের খবরদারি।