স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের শনাক্ত করে শিগগির গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছি।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
করণীয় নিয়ে আজ সভা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর এ সভা মনে করছে, তদন্ত হওয়ার আগে আমরা মনে করছি, আমরা সিদ্ধান্তে আসিনি। আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল, কোনো ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীর কর্ম। আমরা তদন্ত শেষে আপনাদের সব ঘটনা জানাতে পারবো।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এরই মধ্যে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী, যেখানে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। কুমিল্লার দুঃখজনক ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করবো।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ বুধবার (১৩ অক্টোবর) কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব জায়গায় চলে যায়। হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদপুরে চারজন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি। সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক ঘটনা ঘটছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করবো। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের শনাক্ত করে খুব শিগগির গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।’
এ ঘটনায় কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লায় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সারাদেশে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে সেখানে গ্রেফতার হবে। আমরা চাই সুনির্দিষ্টভাবে যারা জড়িত ছিল কিংবা উসকানি দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে। অনেককে ভিডিও দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবকিছু পরে জানাব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেবো। আমরা আরও স্পষ্ট করে বলতে পারি, যারা ধর্মকর্ম করে যারা ধর্ম বিশ্বাস করে তারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে না। অসাম্প্রদায়িক মেলবন্ধ নষ্ট করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করি।’
এ ঘটনার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবণতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এ ধরনের চেষ্টা করছেন কিংবা অব্যাহত রাখবেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। যেসব জায়গায় এ ঘটনা ঘটছে, সেখানে যদি কেউ উসকানি দিয়ে থাকেন তাকেও আইনের আওতায় আনবো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্গাপূজা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত ছিল যেখানে পূজা হবে সেখানে পূজা কমিটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরও ভলান্টিয়ার থাকবে। অনেক পূজামণ্ডপেই সেগুলো করা হয়নি। আমি তাদের আবারও আহ্বান করছি পূজামণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসেন। ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেন। প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, আমরা এ আহ্বান করছি। কেউ যাতে কোনো ধরনের উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’
‘আমরা ফেসবুকে দেখলাম আইজিপি সাহেব নাকি একটা নির্দেশনা দিয়েছেন, পূজা বন্ধ। আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেইনি। যারা এ ধরনের অপচেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের এ ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে দেবো না।’
বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর স্বল্পতা থাকলে সেখানে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। স্বল্পতা মানে হলো আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী নেই তা নয়।