নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা দিল বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে ১১ বারের দেখায় নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবার হারাতে পারলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা।
পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ৭ উইকেটের বড় জয়ে ১-০ ব্যবধানে লিড নিল টাইগাররা।
বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। প্রথমে ব্যাট করে ১৬.৫ ওভারে মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয় কিউইরা। অবশ্য এটি কিউইদের সর্বনিম্ন রানের যৌথ রেকর্ড। ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশেই চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২০ রান তাড়া করতে নেমে ১৫.৩ ওভারে ৬০ রানে অলআউট হয় দলটি। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ও ৩০ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
৬১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও অবশ্য ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারের মধ্যে দলীয় ৭ রানের মাথায়ই দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম (১) ও লিটন দাশ (১) ফিরে যান। নাঈমের উইকেটটি নেন অভিষেক হওয়া কোল ম্যাককোচিন। আর লিটনকে ফেরান এজাজ প্যাটেল।
তবে এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪২ বলে ৩০ রান করে বিপদ সামাল দেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সাবলিল ব্যাটিং করা সাকিব রচিন রবীন্দ্রর বলে কাট করতে গেলে উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের গ্লাভসে ধরা পড়েন। ৩৩ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেন এই বাঁহাতি তারকা। অভিষিক্ত কিউই স্পিনারের এটি ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট
বায়ো-বাবোলের ঝামেলার কারণে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলতে না পারা মুশফিক এদিন খেলছিলেন বেশ দেখেশুনে। সাকিব বিদায় নিলেও নিজের স্ট্রাইক রেটের দিকে না তাকিয়ে ও দলের কথা চিন্তা করে খেলে গেছেন ধীরে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে জুটিতে ৩১ বলে ২৫ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। মুশফিক ২৬ বলে ১৬ ও রিয়াদ ২২ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়া নিউজিল্যান্ডের এই দলটাকে তৃতীয়সারির বললেও ভুল হবে না। কেননা তাদের বিশ্বকাপে ঘোষিত কোনো ক্রিকেটারই যে এই সিরিজে নেই। তবে একটা ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার মতো দল এসে যেখানে বিধ্বস্ত হয়ে ফিরেছে, সেখানে কিউইরা কেমন করে এই দলটি পাঠাল? তার খেসারতই হয়তো প্রথম ম্যাচে দিল।
এদিন ব্যাটিংয়ে শুরুতেই নড়বড়ে ছিল নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। পাশাপাশি আগের সিরিজের মতো এবারও ভয়ঙ্কর স্পিন নির্ভর দল গড়ে বাংলাদেশ। তাইতো ঘূর্ণি সামাল দিতেই ঘাম ঝরল ব্ল্যাকক্যাপস ব্যাটসম্যানদের।
প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে উদযাপনের শুরুটা করলেন মেহেদী হাসান। অভিষেক হওয়া আলোচিত রচিন রবীন্দ্রকে কট এন্ড বোল্ড করে ফেরালেন শূন্য রানে। এক ওভার পর উইল ইয়ংকে বোল্ড করে ফেরান দলের সবচেয়ে বড় স্পিনার সাকিব আল হাসান। মেহেদী-সাকিবে উল্লাস দেখে বসে থাকতে পারেননি তরুণ নাসুম আহমেদও। অজি সিরিজে ঝলক দেখানো এই বাঁহাতি চতুর্থ ওভারে টম ব্লান্ডেল ও অভিজ্ঞ কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমেকে। এরই ফলে দলীয় ৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা সফরকারীরা।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে কিছুটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। এ জুটি ৪১ বলে ৩৪ রান যোগ করে। তবে ১১তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিজের প্রথম স্পেলে এসেই বাজিমাত করলেন এই জুটি ভেঙে। ২৫ বলে ১৮ রান করা কিউই দলনেতা ল্যাথামকে নাসুমের ক্যাচ বানান তিনি। পরের ওভারেই ফের সাকিবের আঘাত। এবার আরেক অভিষিক্ত কোল ম্যাককোনচিকে শূন্য রানে মাঠ ছাড়া করান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
১৩তম ওভারের শেষ বলে ১৮ রান করা নিকোলসকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান সাইফ। আর শেষদিকে তিন টেলএন্ডারকে ডাগ ব্রেসওয়েল, এজাজ প্যাটেল ও জ্যাকব ডাফিকে ফিরিয়ে উইকেটে ভাগ বসান মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান মোস্তাফিজ। দুটি করে উইকেট দখল করেন নাসুম, সাকিব ও সাইফ। মেহেদী নেন একটি উইকেট।
ব্যাটে-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান সাকিব।