সংবিধান অনুযায়ী দেশে দ্বাদশ নির্বাচন শেষে এখন সংসদ অধিবেশন চলছে। ইতোমধ্যে সংসদের বিভিন্ন কমিটিও চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দলটির চেয়ারম্যান জি.এম কাদের তার আসনে বসেছেন। কিন্ত বহুল আলোচিত জাতীয় পার্টির বিভক্ত দলটির স্বঘোষিত চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবার সংসদের বাইরে।কারণ তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে নানান অসঙ্গতি চলছে। এ কারণে নানা নাটকীয়তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন ফরম নেননি বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার দ্বাদশ সংসদে অংশ নেওয়ার আর সুযোগ নেই। এর মধ্য দিয়ে ৩২ বছর পর রওশনকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে যাচ্ছে জাপা। রওশনের মতো এরশাদপুত্র সাদ এরশাদও এবার সংসদে নেই। একই সঙ্গে রওশন অনুসারী জাপা নেতাদেরও মনোনয়ন না দেওয়ায় তারাও সংসদে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগছে এখন কী করবেন রওশন এরশাদ।
এদিকে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে শুরু হয়েছে গৃহ বিবাদ। এবার দলটিতে দ্বন্দ্বের উৎপত্তি দলীয় কার্যালয় দখল নিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ‘দখলে’ নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেন রওশন এরশাদের অনুসারীরা। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে জাতীয় পার্টির মধ্যে শুরু হয়েছে গৃহদাহ, স্পষ্ট হচ্ছে ভাঙনের আলামত। পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও। দলে ভাঙন সৃষ্টির চক্রান্তের অভিযোগে দুই সিনিয়র নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় সামরিক শাসক প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি বড় সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলের ক্ষমতা নিজেদের কাছে রাখতে দলটির অভ্যন্তরে চলছি বহিস্কার আর অব্যাহতির খেলা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে বহিস্কার করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিদায়ী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে চরম বিরোধ চলছে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের। নানা বিষয় নিয়ে দেবর-ভাবির মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব বিরাজমান। বিরোধের জেরে সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এরশাদ ও ছেলে সাদ এরশাদসহ তার অনুসারীরা।
জানা গেছে, জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে এখন দা-কুমড়া সম্পর্ক বেশ পুরোনো। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে নানান ঘটনায় জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীন সমস্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সুরাহা হয়। সর্বশেষ বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে রওশনকে সরিয়ে দিয়ে জাপা থেকে উদ্যোগ যখন নেওয়া হয়েছিল তখনও প্রধানমন্ত্রীর কারণে রওশন এরশাদ টিকে বিরোধী দলীর নেতার আসনে। সে যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রক্ষা পান তিনি।
সর্বশেষ মনোনয়ন নিয়ে জাপায় যে নাটক চলছিল, তাতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করবেন এমন একটা আশা রওশনপন্থিদের ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। এতে করে নির্বাচন থেকেই ছিটকে গেলেন রওশন। শারীরিকভাবে অসুস্থ ৮২ বছর বয়সি রওশন এখান থেকে কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, নাকি শেষ হতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারÑ এমন প্রশ্ন অনেকের।জাপার সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘ছায়া’ উঠে যাওয়ায় দলে দুর্বল হয়ে পড়েন রওশনপন্থিরা। এখন যে যার মতো নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে মুখ খোলেননি রওশন এরশাদও।
এবিষয়ে জাতীয় পাটির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ভোরের পাতাকে বলেন , এখন রাজনীতির বাইরে থাকতে চাই। পার্টির ভেতরে যে নোংরামি দেখছি তাতে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য কিছুটা অবসর চাই।