কোরবানপুরে মনসা দশমীতে হিন্দু মুসলমানের মিলনমেলা
আবদুল আলীম, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
কুমিল্লার মুরাদনগরে কোরবানপুর শুক্রবার রাতে বসেছিল হিন্দু মুসলিমের মিলন মেলা। সনাতন সম্প্রদায়ের মনসা পূজার দশমীকে কেন্দ্র করে সেখানে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের অসংখ্য নারী পুরুষের উপস্থিতিতে অনুকরণীয় এক মহা মিলনমেলার দৃষ্টিনন্দন এক চমকপ্রদ দৃশ্য দেখা গেছে।
মনসা পূজার দশমীকে ঘিরে পুরো কোরবানপুর গ্রামটি যেনো গত তিনদিন ধরে একটি আনন্দ ধামে পরিণত হয়েছিলো। গ্রামবাসির সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা শুকলাল দেবনাথের পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগে তিন বছর পর আবারও এবছর কোরবানপুর গ্রামে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ওই মনসার দশমী অনুষ্ঠিত হয়।
এতে কোরবানপুরসহ আশ পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৩০টির মতো মনসার নান্দনিক প্রতিমা দশমীর উৎসবস্থলে আসতে দেখা যায়।
এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থলে সার্বজনীন মনসার দশমীকে কেন্দ্র করে একটি ঋদ্ধ আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এতে কোরবানপুর গ্রামের বিশিষ্টজন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপক শ্রী সঞ্জীব কুমার দেবনাথ সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১৫ আগস্ট নিহত জাতির জনকসহ বিগত দিনে ওই গ্রামের মৃত বিশিষ্টজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রপাঠসহ প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে এই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন মুরাগনগরের রহিমপুর অযাচক আশ্রমের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট পন্ডিত ডা. শ্রীমৎ যুগল ব্রহ্মচারী মহারাজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব বিশিষ্ট ধর্মীয় আলোচক শ্রী নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুরাদনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, বাঙ্গরা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দীনেশ দাসগুপ্ত, মুরাদনগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শ্রী নিত্যানন্দ রায়, সাধারণ সম্পাদক শ্রী রামপ্রসাদ দেব, দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ডা. শ্রী জহরলাল ভৌমিক প্রমুখ। এসময় মঞ্চে কুমিল্লা ও মুরাদনগর থেকে আগত পুজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দশমী অনুষ্ঠানে সারারাতভর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগীতা শেষে সামগ্রিক বিবেচনায় খোষঘর গ্রামের শান্তি সংঘের প্রতীমাকে প্রথম, একই গ্রামের পরিমল দাসের বাড়ির প্রতীমাকে দ্বিতীয় এবং কোরবানপুর গ্রামের কালী সংঘের প্রতীমাকে তৃতীয় ‘শ্রেষ্ঠ প্রতিমা’ হিসেবে ঘোষণা করে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রচুর সংখ্যক পুলিশকে রাতভর অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।