খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার (১৩ই আগস্ট)। ২০১১ সালের এই দিনে ‘কাগজের ফুল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং লোকেশন দেখে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা নামক স্থান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।
সে সময় তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তিনিও একই দুর্ঘটনায় মারা যান। এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় আরও তিনজনসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
তারেক মাসুদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মভূমি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গা পৌরসভার নূরপুর মহল্লায় তার গ্রামের বাড়িতে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৯টায় তারেক মাসুদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বাড়ির আঙিনায় স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ঢাকার শর্ট ফিল্ম ফোরাম, ফরিদপুরের তারেক মাসুদ ফিল্ম সোসাইটিসহ ভাঙ্গার বিভিন্ন সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করবে।
তারেক মাসুদ ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও গীতিকার। ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুরে তার জন্ম। বাবা মশিউর রহমান মাসুদ এবং মা নুরুন নাহার মাসুদ।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি পাওয়া তারেক মাসুদ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। ভাঙ্গা ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে তার শিক্ষাজীবন শুরু। পরবর্তীতে ভর্তি হন ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসায়। সেখান থেকে মৌলানা পাসও করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।
এরপর ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তারেক মাসুদ। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন তিনি।
প্রায় ২০ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারেক মাসুদ। এরপর ঢুকে পড়েন ছবি নির্মাণের কাজে। ২০০২ সালে তার নির্মিত প্রথম ছবি ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবের মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। যেটি ওই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।
এছাড়া, ‘আদম সুরত’, ‘মুক্তির গান’, ‘অন্তর্যাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’সহ বেশ কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার ও চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও পুরস্কৃত হন।