নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা শাটডাউনের সম্মুখীন হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তাঁর দাবি, শিগগিরই স্থিতিশীল সরকার গঠন না হলে গোটা শ্রীলঙ্কা শাটডাউন তথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিউজনাইট প্রোগ্রামে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
চলমান আর্থিক ও জ্বালানি সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়ামের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ‘অনেক অনিশ্চয়তা’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। কারণ, আন্তর্জাতিক বেলআউট প্যাকেজ পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতিও একটি স্থিতিশীল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
ফলে নজিরবিহীন এ সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারসহ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করে শ্রীলঙ্কায় গণআন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এমনকি রাজাপাকসে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকার থেকে সরে যান। সবশেষ দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেও পদত্যাগ করে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান।
বিবিসি বলছে, গত এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তিনি বলছেন, স্থিতিশীল প্রশাসন ছাড়া কীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করা যায় সে সম্পর্কে তিনি ‘কোনো পথ দেখতে পাচ্ছেন না’।
প্রসঙ্গত, শাটডাউনের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া, বিবিসির পৃথক এক প্রতিবেদনে কোনো রাষ্ট্র শাটডাউনের অর্থ ওই দেশের সরকারি কর্মকাণ্ডে অচলাচস্থা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো অভিধানে শাটডাউন মানে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া।
অর্থাৎ জরুরি সেবা (ওষুধ, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম) ছাড়া অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ হয়ে যাওয়া। আবার কোথাও কোথাও শাটডাউন মানে স্থবিরতাও বোঝানো হয়েছে।