পঞ্জিকার পাতায় এখন ভরা বর্ষা। আকাশজুড়ে থাকার কথা ঘন কালো মেঘ। ঝুম বৃষ্টিতে শীতল হবার কথা প্রকৃতি। কিন্তু ঋতুচক্রের নিয়ম ভেঙে সে আকাশ এখন শরতের মতো শুভ্র। আর সূর্য্যটাও ঢেলে দিচ্ছে তীব্র তাপদাহ। এমন অবাক বর্ষাকাল দীর্ঘদিন দেখেনি কেউ। এক সপ্তাহ ধরে এমন বিরুপ আবহাওয়ায় আর পেরে উঠছে না জনজীবন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুপ্রবাহের অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এর কারণ। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যখন বাতাস প্রবাহিত হয়, এ বাতাস বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্পযুক্ত বাতাস নিয়ে আসে যেটি মেঘালয়য়ে আঘাত করে আকাশে মেঘের সৃষ্টি করে এবং বৃষ্টি হয়। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে বাতাস যেহেতু পুর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে এর ফলে দেশের আকাশে কোনোভাবেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারছে না।
তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে দাবদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি এমন নানা বৈরিতা এখন বাস্তবতা। এর ভুক্তভোগী বিশ্বের প্রতিটি দেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নগরগুলোতে জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে । খাল, বিল, নদী-নালা এগুলো গ্রিন করতে হবে। এতেই আমাদের পরিবেশ সুন্দর হবে। প্রকৃতি ফিরে পাবে তার রূপ। তবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ না কমানো গেলে সবার জন্যই অপেক্ষা করছে এক দুর্যোগপূর্ণ ভবিষ্যৎ।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে মাঝারি থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামি ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। সে সময় বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন আজ দুপুরে জানান, চলমান ভ্যাপসা গরম পরিস্থিতি আরও দু’দিন চলতে পারে। এই দু’দিন সারাদেশের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। চলমান তাপদাহ আগামি সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি জানান, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনি ও চূয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে
এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে এসব অঞ্চলে যে গরম অনুভূত হচ্ছে, তা আরও দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা
হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।
আজ সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ বদলগাছীতে সর্বনি¤œ ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দমমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের
কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরণের ভারি বর্ষণ হতে পারে। পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, উত্তর উড়িষ্যা ও এর কাছাকাছি এলাকায় লঘুচাপটি অবস্থান করছে। এর একটি বাড়তি অংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমী বায়ূর অক্ষ রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমী বায়ূ বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরণের সক্রিয় রয়েছে।
আজ সকাল থেকে ঢাকায় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘন্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতাা ছিল ৮৭ শতাংশ। ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬ টা ৪৯ মিনিটে এবং আগামিকাল ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে।