প্রমত্তা পদ্মায় প্রায় এক যুগ ধরে চলেছে সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ। বাঙালির দীর্ঘ এই প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে ২৫শে জুন। পদ্মাসেতু তৈরির ইতিহাসে আছে নানা বাধা বিপত্তির গল্প। তবে, সবকিছু উপেক্ষা করে স্বপ্নে সঞ্জীবিত শেখ হাসিনা এই সেতু নির্মাণে ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী। সরকার প্রধানের নির্দেশে প্রকল্পের প্রতিটি সদস্যের ছিলো অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার বুকভরা সাহস।
পানিপ্রবাহের দিক থেকে পদ্মা নদী বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয় এতে। তাই পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণ ছিলো খুব চ্যালেঞ্জিং।
তারপরও ২০০১ সালের ৪ঠা জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেটে গেছে দুই দশকের বেশি সময়। সবশেষ গেলো ১০ ডিসেম্বর সবশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে যুক্ত হয় মাওয়া-জাজিরা দুই প্রান্ত। দৃশ্যমান হয়ে উঠে ছয় দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু।
এ যাবৎকালের সবচে বড় এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি শুরু করে নকশা ও পুনর্বাসন কাজ। প্রকল্পে রেলপথ যুক্ত হয় ২০১১ সালে।
২০১২ সালের ২৯ জুন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। একইসাথে এই প্রকল্প থেকে সরে যায় এডিপি, জাইকা এবং আইডিবির মতো উন্নয়ন সহযোগীরা। সিদ্ধান্ত হয় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির।
যদিও ২০১০ সালেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। সংস্থাটি কানাডা পুলিশকে সেদেশের এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে। প্রায় ছয় বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত ওই মামলা খারিজ করে দেয়।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজ উদ্বোধন করেন। দোতলা এই সেতুর উপরের চার লেনে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন। এছাড়া এই জনপদসহ আশপাশের অনেক জেলার জন্য সেতুর দিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন। পুরো প্রকল্পে খরচ ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সেতুটির ঠিকাদার হলেও বিশাল এ কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন দেশের বহু প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাঁচামালের ২৫ শতাংশই এসেছে দেশের ভেতর থেকে।
এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থিক বাধার পর বড় বিপত্তি ছিল করোনা অতিমারি। কিন্তু বাধা হয়ে ওঠতে পারেনি তা।
পদ্মা সেতু প্রাথমিক অবয়ব পায় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে প্রথম স্প্যান। পরের তিন বছরে বসেছে বাকি ৪১টি স্প্যান। চীনের হুবেই প্রদেশে তৈরি হওয়া স্প্যানগুলো জাহাজে করে এনে বসানো হয়েছে।
স্বপ্নের এই সেতু দক্ষিণের ২৯ জেলার ৩ কোটি মানুষের জন্য বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দারিদ্র্য কমাবে এক দশমিক নয় শতাংশ হারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে এক দশমিক ২৩ শতাংশ।