ক্যারিয়ারের পঞ্চম ইউএস ওপেন ও সব মিলিয়ে ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের সুষ্পষ্ট লক্ষ্য এখন রাফায়েল নাদালের সামনে। আর এই লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নোভাক জকোভিচ এবার আর কোন বাঁধা হয়েই দাঁড়াতে পারছেন না। করোনা ভ্যাকসিন দিতে অস্বীকৃতি জানানো সার্বিয়ান তারকার নিউ ইয়র্কে প্রবেশে বিধিনিষেধ থাকায় ইতোমধ্যেই টুর্ণামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
১৯ বছর আগে নিউ ইয়র্কে ইউএস ওপেনে অভিষেক হয়েছিল নাদালের। এরপর ইনজুরি আক্রান্ত ক্যারিয়ারে ৩৬ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ তারকা ২০১০, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে জিতেছেন বছরের শেষ এই গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা। ২০১৯ সালই ছিল নাদালের সর্বশেষ টুর্ণামেন্ট। এনিয়ে চারবার ইউএস ওপেন থেকে নাম প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিলেন নাদাল। ইনজুরির কারনে এবারো অবশ্য ফ্লাশিং মিডোতে দুই সপ্তাহের ব্যস্ত সময়টা শেষ পর্যন্ত সফলভাবে কাটবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
পেটের পেশীর ইনজুরির কারনে উইম্বলডনের সেমিফাইনালে নিক কিরিওসের বিপক্ষে ওয়াকওভার দিতে বাধ্য হয়েছিলেন নাদাল। তারপর থেকে কোর্টের বাইরেই ছিলেন। মাসের শুরুতে সিনসিনাতি মাস্টার্সে কোর্টে ফিরলেও প্রথম রাউন্ডেই বোর্না কোরিচের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেন। ইউএস ওপেনের আগে গত দুই মাসে এই একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছেন নাদাল।
ইউএস ওপেনে খেলতে এসে নাদাল স্বীকার করেছেন সিনসিনাতিতে ইনজুরির মাত্রা যেন বেড়ে না যায় সে কারনে তিনি বেশ সতর্ক ছিলেন। কার্যত ইউএস ওপেনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি এই টুর্নামেন্টে খেলেছেন। এ সম্পর্কে নাদাল বলেন, ‘সিনসিনাতি মাস্টার্সে আমি কার্যত নিজের ফিটনেস পরখ করতেই মাঠে নেমেছিলাম। অনুশীলনেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। কোন ধরনের কঠিন ওয়ার্ক আউট গত কয়েক দিনে করিনি। সিনসিনাতির ম্যাচটিতে নিজের শরীরের ওপর কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করিনি। বিশেষ করে সার্ভিসে কোন ধরনের জোড় দেইনি। আশা করছি ইউএস ওপেনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র এটুকুই বলতে পারি। তবে সার্ভিসের উপর বিশেষ যতœ নিয়েছি।’
গত জুনে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা জয় করেছেন নাদাল। কিন্তু পুরা টুর্ণামেন্টেই ব্যাথা-নাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে তিনি কোর্টে নেমেছিলেন। এবারের ইউএস ওপেন জিততে পারলে ক্যারিয়ারে গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড বাড়ার পাশাপাশি বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটাও নিশ্চিত হবে। ২০১৯ সালের ফাইনালে দানিল মেদভেদেভকে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিলেন। এবার নাদালের সামনে সুযোগ এই মেদভেদেভের কাছ থেকেই শীর্ষস্থানটি ছিনিয়ে নেবার।
নাদাল যখন নিউ ইয়র্কে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন তার লম্বা সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী জকোভিচ ইউরোপেই অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোভিড নীতির কারনে শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহারে বাধ্য হন এই সার্বিয়ান তারকা। ভ্যাকসিন না নেবার কারনে অবশ্য এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনসহ বেশ কয়েকটি মাস্টার্স টুর্ণামেন্টেও খেলা হয়নি জকোভিচের। ক্যারিয়ারে তিনটি ইউএস ওপেন শিরোপার সর্বশেষটি জিতেছিলেন ২০১৮ সালে। ১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মত এক ক্যালেন্ডার বছরে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন ২০২১ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালে মেদভেদেভের কাছে পরাজিত হয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল ৩৫ বছর বয়সী জকোভিচের। গত মাসে সপ্তম উইম্বলডন শিরোপা ঘরে তোলার পর আর কোর্টে নামা হয়নি সাবেক এই সার্বিয়ান নাম্বার ওয়ানের। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি ক্যারিয়ারের ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
জকোভিচের এবারের না খেলাটা নিয়ে দু:খ প্রকাশ করে নাদাল বলেছেন এই বিষয়টি অবশ্যই অস্বস্তির। এটা একইসাথে সমর্থক, টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি, অন্যান্য খেলোয়াড়ের জন্য হতাশার। কারন যেকোন টুর্ণামেন্টেই সবাই সম্ভাব্য সেরা খেলোয়াড়দের কোর্টে দেখতে চায়। ইনজুরির কারনে এবারের আসরেও খেলতে পারছেন না বিশে^র আরেক শীর্ষ তারকা রজার ফেদেরার। নাদালের ফিটনেস ও জকোভিচের অনুপস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অন্যান্যদের সামনে সুযোগ এসেছে নিজেদের যোগ্যতা প্রমানের। মারিন সিলিচ, স্ট্যান ওয়ারিঙ্কা, ডোমিনিক থিয়েম ও মেদভেদেভ- এদের প্রত্যেকের সামনেই সুযোগ আছে ২০১৪ সালের পর ‘বিগ থ্রির’ বাইরে গিয়ে ইউএস ওপেনের শিরোপা জয়ের তালিকায় নিজেদের নাম লেখানোর। বিশেষ করে মেদভেদেভ এবার নিজেকে দারুনভাবে প্রস্তুত করেই কোর্টে নামছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের কারনে উইম্বলডনে সকল রাশিয়ান খেলোয়াড়ের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যে কারনে অন্যান্যদের সাথে মেদভেদেভেরও উইম্বলডনে খেলা হয়নি। অল ইংল্যান্ড ক্লাবে খেলা না হলেও ২৬ বছর বয়সী মেদভেদেব লস ক্যাবোসে হার্ড কোর্ট শিরোপা জিতে ইউএস ওপেনের প্রস্তুতিটা ভালভাবেই সেড়ে নিয়েছেন।
বিশে^র দুই নম্বর খেলোয়াড় ও ২০২০ সালের রানার-আপ আলেক্সান্দাার জেভরেভ ইনজুরির কারনে এবার খেলতে পারছেন না। তবে চতুর্থ র্যাঙ্কধারী ও ২০২১ সালের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট তরুন কার্লোস আলকারাজ মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথমবারের মত ক্যারিয়ারে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন। আলকারাজ বলেছেন, ‘গত বছরের তুলনায় নিজেকে শক্তিশালী ও আরো বেশী প্রস্তুত করে এখানে এসেছি। এ বছর বেশ কিছু শীর্ষ খেলোয়াড়ের বিপক্ষে আমি লম্বা ও কঠিন ম্যাচ খেলেছি। যে কারনে আমার কাছে মনে হচ্ছে এ বছর আমি আরো বেশী প্রস্তুত।’
গত বছরের সেমিফাইনালিস্ট ফেলিক্স অগার-আলিয়াসিমে বাদে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০ খেলোয়াড়ের নিউ ইয়র্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর মধ্যে কাসপার রুড, ক্যামেরুন নোরি ও হুবার্ট হারকাজের এখনো ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা হয়নি।