করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দেড় বছর পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভা। সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সিদ্ধান্তের কথা।
তিনি বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত (স্কুল-কলেজ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। এদিন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শুরুতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেয়া হবে। পঞ্চম শ্রেণির, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবেন। অন্য শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে আসবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে এলে ধীরে ধীরে অন্য শ্রেণিগুলোকেও একদিন একদিন করে বাড়ানো হবে। প্রথমেই ৬-৮ ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে না। কোনো অ্যাসাম্বিলি হবে না। অবস্থা বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রয়োজন হলে করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরা ছাড়া কেউ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একেবারে কমবয়সী যারা, তাদের কোনো সংকট হচ্ছে কি না তা শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাস্ক পরিধান করা ছাড়া কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকবেন না। অভিভাবকদের এখানে বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা তাদের সন্তানদের বাসা থেকেই মাস্ক দিয়ে দেবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরিধান করেই আসে। শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। তিনি বলেন, যত ধরনের গাইডলাইন আছে, সেগুলো শিক্ষকরা নিশ্চিত করবেন। সচেতনতা তৈরির প্রয়োজন আছে। এই রোগটি (করোনা) প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
এছাড়াও ১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে বলে জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগে বলেছেন ১৮ বছরের অধিক যারা তাদের সবাইকে টিকা দিয়ে দেই। সেই কার্যক্রম চলছে। ১২ বছরের অধিক যারা তাদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসি, সেটির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ বছরের অধিক বয়সীদের সব ধরনের টিকা দেয়া যায় না। যে টিকাগুলো দেয়া যায় সেগুলো কিছু নিয়ে আসা হয়েছে, আরও নিয়ে আসা হবে। সেগুলো প্রয়োগের জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়। সে প্রস্তুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিচ্ছে। আমরা সহসাই সেই কার্যক্রম শুরু করবো। টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১২ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা পর্যায়ক্রমে অবশ্যই দেব।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে স্থগিত হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে। ওইদিন থেকে ২০১৮ সালের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফয়জুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পরীক্ষায় তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেন্দ্রে আসন বিন্যাস করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে যথাসময়ে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নেয়ার শর্তে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর আবাসিক হল খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাস খোলার আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষ নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলে অবস্থান করবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া হলে কোনো গণরুম থাকবে না বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন করোনা বলে নয়, স্বাভাবিক সময়েও গণরুম তাদের জন্য অভিশাপ। গণরুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা। নতুন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী দিলুয়ারা বেগম বলেন, গণরুম আমাদের জন্য এক ধরনের অভিশাপ। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে গণরুমে বসবাস করা সম্ভব নয়। হল খোলার পর গণরুম না রাখার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে যৌক্তিক ও প্রশংসনীয়। পড়াশোনার পরিবেশের জন্য গণরুমকে বাধা উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইস্রাফিল আল-আলামিন বলেন, গণরুমে পড়াশুনার পরিবেশ নেই। তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর অবস্থা তো রয়েছেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের গণরুমে না রাখার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী বাবুল চন্দ্র দাস বলেন, গণরুম না রাখার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। বিশ্ববিদ্যালয় যদি গণরুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে পারে, তাহলে তা হবে শতবর্ষ পূর্তির সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। হল খোলার প্রস্তুতি এবং গণরুমের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, হলগুলোতে এখন আর গণরুম থাকবে না। উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে প্রভোস্ট কমিটি একটি নীতিমালা করেছে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবেন না, অবশ্যই নির্ধারিত একটি খাট থাকবে। গণরুমে কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না। মানসম্পন্ন রুমগুলোতে আমরা তাদের জন্য সিট বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। হল খোলার পর এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।