পদ্মায় ডানা মেলেছে স্বপ্নের সেতু। যে জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ছিলেন কোটি মানুষ বহু বছর ধরে। কিন্তু বাস্তবায়নের পথযাত্রা কতটা সহজ ছিল ইতিহাসের অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের?। মুক্ত আকাশে স্বপ্নের সেতু ডানা মেললেও পেছনের গল্পটা পূর্ণ ছিল অসংখ্য চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা আর প্রতিবন্ধকতায়।
প্রতিশ্রুতি দিয়েও পাশে থাকেনি দাতা সংস্থারা উল্টো বাস্তবায়নের পথে বাধা তৈরি করেছে নানা সময়ে। কিন্তু অসীম সাহস, আত্মবিশ্বাস আর সততার কাছে হার মেনেছে সবকিছু।
২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই অগ্রাধিকারের শীর্ষে জায়গা পায় এই প্রকল্প। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে শুরু হয় নকশা চূড়ান্তের প্রক্রিয়া। এরপর ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি বর্তমান সরকার ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একবার প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেকে।
সে সময় এই প্রকল্পে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক। কিন্তু ২০১১ সালের জুলাই-আগস্টে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। এরপর বহু চিঠি চালাচালি, আলোচনা আর জলঘোলা করার পর ২০১২ সালে ২৮ জুন প্রতিশ্রুত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক, সরে যায় অন্যরাও।
এরপর প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে বহু চেষ্টা চালায় সরকার। পদত্যাগে বাধ্য করা হয় সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে, ছুটিতে পাঠানো হয় সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। দুদকের মামলায় যিনি জেলও খেটেছেন ৪০দিন।
এতোকিছুর পরও বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে ফিরে না আসায় ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে টাকা না নেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পৌনে দুই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হয় প্রথম স্প্যান।
সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য। অগ্রগতির পথযাত্রায় পোহাতে হয় অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। নদীশাসন থেকে শুরু করে পাইলিং, নকশা, সবখানেই আসতে থাকে নিত্য নতুন প্রতিবন্ধকতা। যা দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করে এগুতে থাকেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীরা।
প্রথম স্প্যানের সোয়া দুই বছর পর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবশেষ স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। এর দেড় বছর পর অবশেষে শনিবার (২৫ জুন) ডানা মেলছে মুক্ত আকাশে।