মাছ শিকারে দুই মাসের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বাজারে উঠতে শুরু করেছে ইলিশ। রাজধানীর বাজারে ইলিশে সয়লাব হলেও দাম চড়া। বেড়েছে সব ধরণের মুরগীর দাম। কাঁচামরিচের বাজারও চড়া। আর বিদেশি ফলমূলের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। এদিকে, বাজার তদারকিতে মাঠে দেখা গেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে।
২৩শে জুলাই মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এরপর সাগরে জাল ফেলছেন জেলেরা। এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছ ঘাটে আসছেন জেলেরা। সেখানকার বাজারে এখন চলছে রূপালী ইলিশের জমজমাট কেনাবেচা।
মাছের চালান নিয়ে পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ভীড় বাড়ছে জেলে ও বেপারীদের। আকারভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
মাছ কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলক কম হলেও পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের দাম এখনও নাগালের বাইরে। উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশের আমদানি বাড়ায় দাম আরও কমবে বলে আশা আড়তদারদের।
মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি জানালেন, সরবরাহ এমন বাড়তি থাকলে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন, তেমনি ক্রেতারাও কম দামে ইলিশ কিনতে পারবেন।
চাঁদপুর ঘাটে সাগর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকায়। আর ৭শ গ্রাম থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৭শ থেকে ৯শ টাকা।
বাজারে আবার এসেছে স্বাদের রূপালি ইলিশ। রাজধানীর বাজারে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাছের রাজাকে। তবে ইলিশে বাজার ভরপুর হলেও দাম চড়া। দুই কেজি ওজনের একটি মাছের কেজি ১৮০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়।
রুই মাছের কেজি ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। সেই রুই মাছের দাম কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে। মাছের বাজারে ক্রেতাদের অসন্তোষ স্পষ্ট। বেড়েছে কাতলা মাছের দামও। আর চিংড়ি রয়ে গেছে আগের মতো বাড়তি দামেই, ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে নদীর চিংড়ি।
বাজারে দাম বেড়েছে মুরগীর। ব্রয়লার মুরগী ১০ টাকা বেড়ে সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর সোনালী মুরগী ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অধিকাংশ দোকানে নেই দেশি মুরগি। যেসব দোকানে আছে ক্রেতা নেই। বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে। তাছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭০০ ও খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের ঈদ থেকে ডিমের দাম বাড়তি, যা এখনও কমেনি। একই দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
শরিফুল হক নামে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের ঈদের শুরুতে ডিম কিনেছি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা ডজন। সেই ডিম মাঝে কিনলাম ১২৫ টাকা ডজন। এখনও সে ডিমের দাম বাড়তি। ১১৫ টাকা ডজন কিনতে হলো।
অন্যদিকে কেউ ন্যায্য মূল্যে আবার কেউ আগের মূল্যে বিক্রি করছেন সয়াবিন তেল।
মিরপুর উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজার ঘুরে জানা যায়, সাদা কিংবা লাল যেটাই নেন আলুর কেজি ৩০ টাকা। ভর্তার জন্য জনপ্রিয় জাম আলু ৪০ টাকা, দেশি ছোট ঝুরি আলু ৩৫ টাকা। কোরবানির ঈদের পর পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমেছে, কিন্তু বেড়েছে রসুনের দাম।
এদিকে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চায়না আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি আদা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও চায়না রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের রিয়াজুদ্দীন বাজার ও চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৭০ টাকার বেগুন প্রতিকেজি ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, করলা ৫০ টাকা, ৮০ টাকার শসা ৬০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, কাঁকরোল ৩০ টাকা, লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিদেশি সব ধরণের ফলমূলের দামও বেড়েছে বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কমলা। আর গেল সপ্তাহের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দিয়ে ২৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে আপেল।
দ্রব্যমূল্যের এমন উর্দ্ধগতিতে ক্ষুদ্ধ সাধারণ মানুষ।
তবে বাজার তদারকিতে দেখা গেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে। সকালে কারওয়ান বাজারে ওজনে কম দেয়া ও পণ্যের মূল্য না টাঙানোর দায়ে বেশ কয়েকজন দোকনিকে জরিমানা করা হয়েছে।