করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। গত ৩০ জুন সাত দিনের বিধিনিষেধসহ প্রজ্ঞাপন জারির পর বন্ধ হয়ে যায় সবধরনের মার্কেট-দোকানপাট। কেবল কাঁচাবাজার সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এবং বিশেষ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ঘোষণা হয়। কিন্তু কাঁটাবনে অবস্থিত পশুপাখিদের বিশাল মার্কেটের কী হবে! খাঁচায় বন্দি এখানকার প্রাণিরা এবার লকডাউনের ডাবল-বন্দি জীবনের ফাঁদে পড়ে গেছে। সোমবার (৫ জুলাই) সেই সাত দিনের ঘোষণা বেড়ে আরও বাড়তি সাত দিনে ঠেকলে কাঁটাবনের দোকানিদের মাথায় হাত পড়ে। এত প্রাণ তারা কীভাবে বাঁচাবেন?
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানের শাটার লাগানো। কিছু কিছু দোকানের কোলাপসিবল গেট লাগানো, কিন্তু শাটার খোলা। দুই-একটা দোকানের সামনে দোকানিরা ঘোরাফিরা করছেন। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করে জানান, সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দোকান খুলে প্রাণীদের খাবার দেওয়া ও থাকার জায়গা পরিষ্কার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই আধাঘণ্টার আগে বা পরে দোকানগুলো খোলার কোনও অনুমতি নেই।
কিন্তু বদ্ধ ঘরে প্রাণীরা কেমন আছে? এখানকার এক দোকানি আকরাম বলেন, ‘প্রাণীদের খোলা আলো-বাতাসের দরকার হয়। ভেতরে ফ্যান চালানো থাকে, কিন্তু সেই বাতাস দিয়ে তাদের ভালো রাখা সম্ভব না। বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারি না। না জানি কেমন আছে ওরা। রাতের কিছু সময় সাধারণত তাদের বন্দি রাখা হয়, কিন্তু লকডাউনের কারণে আধাঘণ্টা বাদে পুরো সময়টা বন্দি থাকায়— এসব পাখিপশু অসুস্থ হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া ঠাণ্ডা ছিল বলে ওরা ভালো ছিল। তবে ভেতরে ভ্যাপসা গরমে অসুস্থতা বাড়বে।’
আনোয়ার নামে আরেকজন দোকান কর্মী বলেন, ‘আমাদের আধাঘণ্টা সময়ে কিছুই হয় না। বেশি সময় বন্ধ থাকায় দোকানের ভেতরটা বেশি অপরিষ্কার হয়। বিষ্ঠা সরিয়ে সেসব পরিষ্কার করা, পানি বদলে দেওয়া, খাবারের ব্যবস্থা করা অনেক কাজ। এদের ফ্রেশ হাওয়া দরকার, সেটাও দেওয়া যাচ্ছে না। কত মানুষ লকডাউন মানছে না, বাইরে এসে বলে তাদের ঘরে খাবার নেই। এই অবলা প্রাণীতো কোথাও বলতেও পারে না। আমরা যারা তাদের আদর যত্ন করি, আমাদের খুব মায়া হচ্ছে, তাদের এই ডাবল বন্দিদশা দেখতে।’
কিছু দোকানের শাটার খোলা কেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবার এই সিস্টেম নাই। যাদের আছে তারা আলো-বাতাস যাতে ঢুকতে পারে, সেজন্য কেবল গ্রিল লাগিয়ে রেখেছে। পরিচর্যার সময়টা যদি গতবারের মতো একটু বাড়িয়ে দেওয়া যেত, তাহলে আর সমস্যা হতো না।’