রাজধানীর ডেমরা, কেরানীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে দুবাইয়ে নারী পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব-৩ এর সহকারি পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রাণী দাস আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শংকর বিশ্বাস (২৫), শেখ হানিফ মিয়া (২৮) মো. জুয়েল হোসাইন (২৯) ও মোছা. শামীমা আক্তার (২১)।
এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিওিতে রোববার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শামীমা আক্তার ভিক্টিমের বান্ধবী। এ পাচারকারী চক্রের মূলহোতা দুবাইয়ে থাকেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনতেও কাজ করছে র্যাব।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রাণী দাস জানান, দুবাইয়ে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল ও সুন্দরী নারীদের দুবাইয়ে নিয়ে যেত তারা। দুবাইয়ে গিয়ে এসব নারীকে জোড়পূর্বক অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করে চক্রটি। এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
তিনি আরও জানান, শামীমার সঙ্গে দুবাই প্রবাসী অপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব হয়। অপু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে বেড়াতে এলে তার সঙ্গে শামীমা ও ভিক্টিম নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় দেখা করে। অপু তখন ভিক্টিমকে দুবাই শপিংমলে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখান। অপুর প্রস্তাবে ভিক্টিম রাজি হলে অপু তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, গোপনে শামীমা ভিক্টিমের পাসপোর্ট তৈরি করে দেন। এরপর অপু নারী পাচার চক্রের মূলহোতা দুবাই প্রবাসী মো. কামাল হোসাইনের (৩৮) মোবাইল নম্বর ভিক্টিমকে দেন। কামাল ভিক্টিমকে রাজধানীর পল্টন মেসার্স মেহরাব এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্টের টিকিট ম্যানেজার শেখ হানিফ মিয়ার (২৮) কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে বলেন।
গ্রেফতারকৃত জুয়েল হোসাইন দুবাই প্রবাসী। তিনি শেখ হানিফ মিয়ার ঘনিষ্ট বন্ধু। দুবাই প্রবাসী চক্রের মূলহোতা কামাল জুয়েলেরও ঘনিষ্ট বন্ধু। ঘটনার সময় জুয়েল দুবাই ছিলেন। তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। কামাল দুবাই থেকে জুয়েলের মাধ্যমে ভিক্টিমের দুবাই যাওয়ার খরচ বাবদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা হানিফের কাছে পাঠান। হানিফ ও তার কর্মচারী গ্রেফতারকৃত শংকর ভিক্টিমের তিন মাস মেয়াদি দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসা এবং বিমানের টিকিট করে দেন।’ ভিক্টিম তার মা ও বোনকে কিছু না জানিয়ে গত ৩০ এপ্রিল রাতে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা করেন।
দুবাই বিমানবন্দরে পৌঁছলে কামাল সুমাইয়াকে তার বাসায় নিয়ে যান এবং তার পাসপোর্ট কেড়ে নেন। এরপর কামাল ভিক্টিমকে জোড়পূর্বক অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই কাজে ভিক্টিম রাজি না হলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভিক্টিম শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাকে উদ্ধারের আকুতি জানান। এরপর ভিক্টিমের মা র্যাব-৩ এ তার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য অভিযোগ করেন।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।