দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অন্যতম পর্যটনের দেশ মালদ্বীপ। এটি ভারত মহাসাগর বেষ্টিত অপরূপ সুন্দর এবং অন্যতম প্রিয় স্থান। এই দ্বীপ বেষ্টিত দেশটিতে স্থানীয় লোকের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা লক্ষাধিক এর উপরে। যত সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে কাজ করেন বাংলাদেশের শ্রমিক তার প্রায় ৭০ শতাংশ। দেশটির শ্রমঘন খাতে নিয়োজিতদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। অফিসিয়াল, আনঅফিশিয়াল, নির্মাণ শিল্প, মৎস ও কুটির শিল্প, হোটেল ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং রিসোর্টে কর্মরতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের লোক। এদেশের জনসংখ্যা খুবই কম। এদেশ দুই ঋতুর দেশ আর এজন্য রোগ বালাই এখানে খুবই কম হয়ে থাকে। তবে ডায়াবেটিস নামক রোগটিতে বেশ কিছুদিন থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে মালদ্বীপের জনগণ।
গতকালের স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায় (৩১ মে) সন্ধ্যায় একটি সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিস (ডিএসএম) এর চেয়ারম্যান আইশাথ শিরুহানা জানিয়েছেন যে মালদ্বীপের ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সংস্থাটি ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য পুরো দেশব্যাপী স্ক্রীনিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন, যাতে রুগীদের রোগের বিকাশের ঝুঁকিতে থাকা গ্রুপগুলিকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।
আইশাথ শিরুহানা জানান সর্বশেষ স্ক্রিনিং থেকে সংগৃহীত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যাদের স্ক্রীনিং করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এখনই এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, (ডিএসএম) পরীক্ষা এই বছরে স্থানীয় দ্বীপগুলির কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় একাধিক দ্বীপে স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হারে ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে থাকা গ্রুপগুলো শনাক্ত করন করা হয়েছিল।
আইশাথ শিরুহানা বলেন, গত সপ্তাহে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট সদস্য এবং পুলিশ সদস্যদের মধ্যে স্ক্রিন করার জন্য, মালদ্বীপের বিনোদনমূলক ক্লাবগুলির সহযোগিতায় একটি স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে যে উভয় সংস্থাটির স্ক্রিনিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে গেলে, সংস্থাগুলির সাথে পরিসংখ্যান ভাগ একই ফলাফল ছিলো এবং উভয় সংস্থাগুলিকে নির্দেশনা দেয়া হয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করেন।
(ডিএমএস) এর মেডিক্যাল অফিসার ডা. আমিনাথ মালহা সাঈদ বলেন, এসকল ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ভাগে হয়ে থাকে। যাকে নির্ণয় করা হয় ডায়াবেটিস ১ এবং ডায়াবেটিস ২, এদের প্রত্যেকের সংক্রমণের ভিন্নতা আছে।
যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধরা পড়ে, তবে তরুণদেরও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ডা. মালহা বলেন, যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ঝুঁকি মূলত ৩০ বছরের বয়সীদের বেশি ঝুঁকি থাকে, এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে কমন দেখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যুবক এবং শিশুদের তাদের উচ্চতার জন্য স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে না এবং অসাবধানতা মূলক খাবারে অবস্তু তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্রেসক্রিপশনের ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও টাইপ ১ ডায়াবেটিসের একমাত্র চিকিৎসা হল ইনসুলিন। শিশুদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণটি অপ্রতিষ্ঠিত রয়ে গেছে।
যা হচ্ছে, শিশুদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই ইনসুলিন তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। এটি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ ওজন হ্রাস, অবিরাম তৃষ্ণা বা ঘন ঘন প্রস্রাব।
বর্তমানে মালদ্বীপে ২০০০ লোক (ডিএসএম) রোগে আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭৫ জনের টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশু। এদের এক-তৃতীয়াংশ বৃহত্তর মালে শহরে। এবং দুই-তৃতীয়াংশ অন্যান দ্বীপে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. মালহা সাঈদ।
সবশেষে ডা. আমিনাথ মালহা সাঈদ বলেন অতি জরুরী ভিত্তিতে ডায়াবেটিস এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এর সংক্রমণ বড় আকারে বিস্তার করতে পারে। এবং মালদ্বীপে বসবাসরত স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি সকল প্রবাসীদেরও সতর্কতার সহিত এর সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য।