শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

বিধিনিষেধ শেষে চেনা রূপে ঢাকা

কে,এম,আর
আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২১

# প্রথম দিনইে সড়কে তীব্র যারজট # চলছে লঞ্চ # ভরা যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন # অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশ পথে যাত্রীর চাপ কম
# শপিং মল খুলেছে, কিন্তু ক্রেতা মেলেনি

হামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে ৪০ দিনের লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার পর বুধবার অফিস-দোকানপাট খুলে গেছে, রাস্তায় নেমেছে গণপরিবহন; মানুষের ব্যস্ততা আর গাড়ির চাপে রাজধানীতে ফিরেছে চিরচেনা যানজট আর কোলাহল, শুরু হয়েছে ট্রেন এবং লঞ্চ চলাচলও।

বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে যানজট। তবে গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা কম। বুধবার সকালে রাজধানীর গাবতলী, আসাদগেট, শ্যামলী, আদাবর, তেজগাঁও, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, পল্টন, মিরপুর, মহাখালী, বনানী ও গুলিস্তান এলাকায় বেশ যানজট ছিল। সড়কের বিভিন্ন সিগন্যালে যানবাহনগুলোকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সকালে গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী ওভারব্রিজের নীচে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় অর্ধশতাধিক মানুষকে। কিন্তু পরপর ৮ নম্বর রুটের দুটি বাস এলেও কোনো গাড়িরই দরজা খোলা হয়নি। সাইফুল ইসলাম যাবেন পল্টনের একটি কার্যালয়ে। ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কোনো বাসে উঠতে পারেননি।

সাইফুল বলেন, এক ডাক্তারের প্রাইভেট কার চালাই। গাড়ির মালিক ১০০ টাকা দিয়েছেন পল্টন যাতায়াতের জন্য। বাস না পেলেতো এই টাকায় যাওয়া সম্ভব না।

রাস্তায় যাত্রীর চাপ বাড়লেও লকডাউনে শুরু হওয়া ভাড়ার মোটরসাইকেল চালকদের লম্বা হাঁক এখনো কমেনি। এতদিন ‘ভিআইপি’ সড়কগুলোতে রিকশা চললেও গতকাল সকাল থেকে সেসব সড়কে রিকশা আটকে জরিমানা করেছে পুলিশ। খুলেছে সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানসহ বিপণি বিতানগুলোও। তবে গতকালের সকালটা দোকান আর বিপণি বিতানের কর্মীদের ধোয়া মোছায় বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।

মোহাম্মদপুর আর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড এলাকায় রাস্তাঘাট অলিগলিতে সকাল থেকেই ছিল মানুষের স্রোত। দোকানপাটেও ছিল ব্যস্ততা। খুশবু বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার সাইফুল বলেন, সবকিছু খোলা। হোটেলে লোক বসিয়ে খাওয়াতেও বাধা নেই। এখানে স্টুডেন্ট আসে বেশি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ইনকামও বাড়বে। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার আল আমিন রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, এতদিন পার্সেল বিক্রি করেছি। আজ থেকে কাস্টমার বসে খাচ্ছে। মাস্ক না থাকলে ঢুকতে মানা করছি। তবে অনেকেই মাস্ক পরছেন না।
আদাবরের জিনিয়া স্টোরের মালিক আমান উল্লাহ বলেন, এতদিন হাফ শাটারে দোকান চালিয়েছি ,এখন পুরো খোলা। তবে মানুষ মানে না। অনেকই মাস্ক ছাড়া ঢুকছে। নিজের ভালো না বুঝলে কীভাবে হবে?

লঞ্চ চলাচল শুরু : ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাট থেকে। বুধবার ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে এমভি ইমাম-হাসান লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর এমভি সোনারতরী, গ্রিন লাইন সদরঘাট ত্যাগ করে। চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী-২ ও রফরফ-৭ লঞ্চে যাত্রীর চাপ ছিল বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক মোহাম্মদ নেওয়াজ। তিনি বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ১৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের মতই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা যাতায়াত করছে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
সদরঘাট থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরিশাল ও মুলাদী রুটের লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যায় বরিশালসহ আন্যান্য দূরের পথের লঞ্চগুলো ছাড়ার কথা রয়েছে।

ভরা যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন : কঠোর বিধিনিষেধ শেষে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ফের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী সকাল থেকে ছেড়ে গেছে। রেলওয়ের দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২০ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে। তবে ঢাকা থেকে একতা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস এবং টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোবরা থেকে বুধবার ছাড়ছে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হলে অন্যসব যাত্রীবাহী গণপরিবহনের মত ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ঈদ ঘিরে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই লকডাউন শিথিল করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ও ট্রেন চালু করে। এরপর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর লকডাউন শুরু হলে ট্রেনও থেমে যায়। সেই বিধিনিষেধের সময়সীমা ১০ অগাস্ট শেষ হয়। বুধবার থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার।

অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশ পথে যাত্রীর চাপ কম : লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রথমদিন দেশের ভেতরে আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই বলে জানিয়েছে দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে আজকে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। আগের মতই তারা চলাচল করছে। নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করছি সামনে যে টানা তিন দিন ছুটি রয়েছে তারপর হয়ত চাপ বাড়বে।
শপিং মল খুলেছে, মেলেনি ক্রেতা: মহামারী নিয়ন্ত্রণের লকডাউনে ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর শপিং মল খুলে দেয়া হলেও ক্রেতা না পাওয়ার কথাই বলেছেন বিক্রেতারা। বুধবার ঢাকার বিভিন্ন শপিংমলে ঘুরে পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্সসহ অন্যান্য দোকানের বেশিরভাগই ফাঁকা দেখা গেছে। বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করছিলেন।

বিক্রেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে ওঠায় ক্রেতা অনেক কম দেখা যাচ্ছে। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের ছেলেদের পোশাকের দোকান ‘লিন্ড’র বিক্রয় কর্মী সাহরিমান মুন বলেন, সকালের দিকে কাস্টমার একবারেই ছিল না। বিকেলের দিকে কাস্টমার টুকটাক আসছে, দেখছে কেউ কিনছে আর কেউ দেখে চলে যাচ্ছে। বলতে গেলে বেচাকেনা একবারেই কম।
একই শপিংমলের ‘মাতৃভূমি ফ্যাশন’র বিক্রয় কর্মী ফারদিন মাহমুদ বলেন, এখনও বেচাবিক্রি নেই। দু’একদিনের মধ্যে হয়তবা বাড়বে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ