বাংলাদেশে যখন গম আমদানি সংকটে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ঠিক তখন দেশটিতে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতীয় সীমান্তে নষ্ট হচ্ছে এক লাখ টন গম। শুধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ৬ সীমান্তে প্রায় আড়াই হাজার ট্রাকে কমপক্ষে ৭৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লাইটার জাহাজে প্রায় ২৫ হাজার টন গম আটকে আছে। গত ১৫দিন ধরে ক্রমাগত বৃষ্টি এবং রোদের মধ্যে তাবু দিয়ে ঢাকা দেয়া অবস্থায় ইতোমধ্যেই গম বোঝাই ট্রাকগুলোতে পচন ধরতে শুরু করেছে।
চলতি মাসে ভারতের ডাইরেক্টর জেনারেল ফরেন ট্রেড এক নোটিফিকেশন জারি করে জানায়, ভারত থেকে গম রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হলো। যদিও চলতি মাসের ১৩ তারিখের আগে জারি করা লেটার অফ ক্রেডিট বা এলসি থাকলে সেই পরিমাণ কম রপ্তানি করা হবে বলে জানানো হয়। পাশাপশি প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের মতো দেশগুলিতেও গম রপ্তানি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে গম রপ্তানিকারকরা ১৩ তারিখের আগের ইস্যু করা এলসির গম রপ্তানি করতে গেলে ভারতীয় কাস্টমসের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ দিনের বেশি সীমান্তে গম বোঝাই লম্বা ট্রাকের সারি তৈরি হলেও জটিলতা কাটেনি। ভারতের এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, আড়াই হাজার এর বেশি গম বোঝাই ট্রাক ও বেশ কয়েকটি লাইটার জাহাজ বোঝাই গম ইতোমধ্যেই সীমান্ত অভিমুখে রয়েছে। ডিজিএফটির নতুন আদেশ ভারতীয় কাস্টমস গম রপ্তানিতে বাধা তৈরি করেছে।
উত্তরবঙ্গ এক্সপোট ইউনিয়নের সম্পাদক ব্রীজ কিশোর প্রসাদ দাবি করেন, আড়াই হাজার নয় পশ্চিমবঙ্গের সব সীমান্ত মিলিয়ে প্রায় ৮০০০ গম বোঝাই ট্রাক সীমান্তে এই মুহূর্তে দাড়িয়ে রয়েছে। তারমধ্যে শুধু উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৮৫০ ট্রাক, ফুলবাড়ী সীমান্তে রয়েছে ২৫০ ট্রাক। তার দাবি ১২ তারিখ এর আগের এলসি করা গাড়িও বাংলাদেশে রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে ভারতীয় কাস্টমস। ডাইরেক্টর জেনারেল ফরেন ট্রেড থেকে নতুন করে তার জন্য অনুমতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। যে অনুমতিপত্র আবার পোষ্টের মাধ্যমে পাঠানো হবে রপ্তানিকারকদের কাছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী সময় নষ্ট হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে লোন করে গম কেনার পর তা রপ্তানি করতে না পারায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানিকারকরা।
অন্যদিকে হিলি এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনার আলাউদ্দিন মন্ডলও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, প্রায় ৮ হাজারের বেশি গম বোঝাই ট্রাক সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার অভিযোগ ভারতের ডাইরেক্টর জেনারেল ফরেন ট্রেড এবং ভারত সরকারের নীতিহীনতার কারণে বিপদে পড়েছে রপ্তানিকারকরা। তার দাবি ভারতীয় কাস্টমস বলছে ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলিতে গম রপ্তানির কথা বললেও সেটি রপ্তানি করা হবে তখন যখন প্রতিবেশী দেশ রপ্তানির জন্য অনুরোধ করবে। তার আগে নতুন করে গম রপ্তানি হবে না প্রতিবেশী দেশেও। তার দাবি বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে গম আমদানি করলে বিপদে পড়বে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান দরকার।
এর আগে ডিজিএফটি-র তরফে ওই সরকারি নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্যতম এই পদক্ষেপ। ১৩ মে ডিজিএফটি জানিয়েছে, এই মুহূর্ত থেকে রফতানি নীতি বন্ধ করা হল। এই নোটিফিকেশনে এও জানানো হয়েছে সরকার চাইলে এই সিদ্ধান্তে বদল হতে পারে। প্রতিবেশী দেশের রপ্তানি অব্যাহত থাকবে এবং অন্য কোনও দেশে যেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে গম সরবরাহ করা দরকার। এই প্রয়োজন অনুভব করলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজিএফটি গম রফতানিতে ছাড়পত্র দেবে। তবে ১৩ মে এবং তার আগে যেসব রফতানিতে লেটারস অফ ক্রেডিট দেয়া হয়েছে সেখানেই একমাত্র গম রফতানি করা হবে। তবে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ ডাইরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের এই অর্ডার সীমান্তে মানছেন না ভারতীয় কাস্টমস। ফলে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে ভারতের ব্যাবসায়ীরা।
ছাড়পত্র না মেলায় গম বোঝাই গাড়ী নিয়ে সীমান্তে ঠায় দাড়িয়ে রয়েছে গাড়ীগুলো। ফলে সমস্যায় পড়েছে গাড়ীর চালক থেকে সহ চালকেরা। আসামের চালক মেহেবুব ইসলাম বলেন, গেল ১৫ দিন ধরে একই জায়গায় গম বোঝাই ট্রাক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। তার মধ্যে বৃষ্টি চলছে তাবু দিয়ে গম ঢাকতে হয়েছে। মালিক মাঝেমধ্যেই গমের মধ্যে বৃষ্টির জল ঢুকেছে কিনা দেখে যায়। বিগত ১৫ দিন ধরেই ট্রাকের মধ্যে আমরা কোনোভাবে না ঘুমিয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।