বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই বিদেশি ৬ জাহাজ থেকে পৌনে ৩ লাখ টনের বেশি গম খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত থেকে আনা এসব গম বাজারে এলে অস্থিরতা কমে স্বস্তি ফিরবে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে গম না এলেও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত থেকে প্রচুর গম আসায় সংকট হবে না বলছে সরকারি সংস্থা। তবে পাইপলাইনে থাকা ৫ লাখ টন ভারতের গম দেশে আনার পরামর্শ আমদানিকারকদের।
গমের বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই গেলো দুই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ভারত তিন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ২১৪ টন গম। বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৬টি জাহাজের মধ্যে ৩টি ভারত থেকে, ২টি কানাডা থেকে এবং ১টি অস্ট্রেলিয়া থেকে গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এছাড়া ৩০ মে ভারত থেকে আরো ৫৬ হাজার টন গম নিয়ে আরো একটি হাজার চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে।
সরকারিভাবে দুই জাহাজে ভারত থেকে এসেছে এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম। জাহাজ দুটো থেকে গম খালাস চলছে।
জাহাজগুলোর স্থানীয় এজেন্ট জানান, গেলো ২২ মে ভারতের গুজরাটের কান্দলা বন্দর থেকে পানামার পতাকাবাহী ‘ভি স্টার’ জাহাজ সরকারি ৫২ হাজার ৫শ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এর আগে ২১ মে ভারতের একই বন্দর থেকে আরো ৫২ হাজার ৫শ টন সরকারি গমের চালান নিয়ে আসে মার্শল আইল্যান্ড পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইমানুয়েল সি’।
ভারতের একই বন্দর থেকে গম নিয়ে গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী জাহাজ ‘প্রোপেল গ্রেস’। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ ওই জাহাজে ৫৯ হাজার ৮৫০ টন গম আমদানি করে।
ভারতে পাশাপাশি কানাডা থেকে গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে দুটি জাহাজ। এরমধ্যে কানাডার ভ্যানকুভার বন্দর থেকে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ স্যামার স্কাই গম নিয়ে গত ১৭ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। ওই জাহাজে থাকা সাড়ে ৩২ হাজার টন গমের আমদানিকারক রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ ।
কানাডার এই বন্দর থেকে গম নিয়ে আসা অন্য জাহাজটি হলো পর্তুগালের পতাকাবাহী ‘এইপোস’। জাহাজটি গত ১৯ মে ৬০ হাজার ৩৭৫ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। ওই গমের আমদানিকারক বসুন্ধরা গ্রুপ।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার গিলং পোর্ট থেকে ১৯ হাজার ৯৮৯ টন গম নিয়ে আসা জাহাজটি হলো সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী জাহাজ ‘থর ম্যাক্সিমাস’। এই গমের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো বিসমিল্লাহ গ্রুপ।
একই আমদানিকারকের আরো ৫৬ হাজার টন গমবাহী একটি জাহাজ আগামী ৩০ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। ওই গমও ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আসা শস্য জাতীয় খাদ্য পণ্য গম আমদানি করছে এর ছাড়পত্র নিতে হয় উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে।
ওই দপ্তরের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ইতিমধ্যে ৬টি জাহাজ রিলিজ অর্ডার নিয়ে গম খালাসের কাজ করছে। আরো কয়েকটি জাহাজ গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৩৬ লাখ ৭ হাজার ২১৪টন। গত অর্থ বছরে আমদানি হয়েছে ৪১ লাখ ৯৯ হাজার টন। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় এবার প্রতিমাসে কম আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ৮৯৭ টন। এছাড়া ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়েও গম আমদানি হয়।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে গম না আসলেও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত থেকে প্রচুর গম আসছে। তাই দেশে সংকট তৈরি হবে না বললেন, সরকারি এই কৃষিবিদ।
দেশে বছরে গমের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন। এই চাহিদার ৬৫ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব গম আমদানি করা হয়। আমদানি কিছুটা কম হলেও বাজারে গমের অভাব নেই। কিন্তু ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দাম বেড়েছে উন্নত-নিম্ন সব মানের গমের।
বিএসএম গ্রুপ এর চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ঋণপত্র খোলা হয়েছে এ ধরণের ৫ লাখ টন গম ভারতে আটকে আছে, যা দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হলে বাজার স্থিতিশীল হবে। সংকট উত্তরণে বিকল্প উৎসের সন্ধান এবং পাইপলাইনে থাকা ভারতীয় গম দ্রুত আনার পরামর্শ আমদানিকারকদেরও।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে আমদানি হওয়া গমের অর্ধেকেরও বেশী এসেছে ভারত থেকে।