করোনা সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও আতঙ্ককে সঙ্গী করে ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। অন্যান্য বছরের মতো না হলেও ঈদের আগ মুহূর্তে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যারা টিকিট পাননি তারা লোকাল বাসে যাচ্ছেন ভেঙে ভেঙে। আর এই সুযোগে লোকাল বাসের কাউন্টারগুলো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। পাশাপাশি দুই সিটে একজন যাত্রী বসার কথা থাকলেও প্রতিটি সিটেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে। ভাড়াও হাকাচ্ছে দ্বিগুণ।
এ ছাড়া যানজটের কারণে গাড়ি ছাড়তে দেরি হওয়ায় কিছু কিছু পরিবহনের যাত্রীদের কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর ব্যস্ততম গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কল্যাণপুর ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়।
গাবতলীতে দূরপাল্লার বাসের টিকিট না পেয়ে লোকাল বাসের টিকিট নিয়েছেন যাচ্ছেন আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘ঈদ করতে যাবো মেহেরপুর। কিন্তু বাসের টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছি। তবে গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত যেখানে ১২০ টাকা, সেই ভাড়া লোকাল বাসে নিল ৩০০ টাকা। ৩০০ টাকায়ও যাত্রীর অভাব নেই। বাসভর্তি যাত্রী আর প্রতিটি সিটিই যাত্রী নিয়েছে তারা।’
সেলফি পরিবহনে পাশাপাশি সিটে বসেছেন আব্দুল্লাহ ও সজিব। তারা জানান, কেউ কাউকে চেনেন না। করোনা মহামারির মধ্যেও এভাবে পাশাপাশি দুজন একসঙ্গে বসা সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত না হলেও বাস থেকেই করোনা আক্রান্ত হতে পারেন বলেও জানান তারা।
ঠিকানা পরিবহনের যাত্রী আমানুর রহমান জানান, করোনার কারণে ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে চাননি। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে এখন যেতে হচ্ছে। তাই দূরপাল্লার বাসের টিকিট না পেয়ে লোকাল বাসে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা থাকেন। মায়ের অসুস্থতার কারণে লোকাল বাসে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি সিটে দুজন বসানোর পরও ১২০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা।’
জানতে চাইলে সেলফি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সিরাজুল আলম বলেন, ‘১৪ দিন লকডাউনে বাস বন্ধ ছিল। আবার ঈদের একদিন পরেই বাস বন্ধ থাকবে। ঈদের কয়েকদিনই শুধু বাস চলবে। এ কারণে কিছু বাড়তি টাকা আয় না হলে আমাদের স্টাফদের ঈদ হবে কীভাবে?’
পাশাপাশি সিটে দুজন যাত্রী নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। দুই সিটে একজন হলে যাত্রীদের অনেকেই বাড়ি যেতে পারবেন না। তাদের উপকারের জন্যই দুজন করে নেয়া হয়েছে।’
এদিকে, গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বরত সারোয়ার জাহান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের দিকে যাওয়ার পতে টাঙ্গাইলে কিছুটা যানজট রয়েছে। এর ফলে গাড়ি পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কিছু কিছু গাড়ি ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। সেজন্য সেসব গাড়ির যাত্রীদেরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া, যাত্রীর তেমন কোনো চাপ নেই। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের যাত্রীর মতোই চাপ রয়েছে। তবে বাস ছাড়ার খবরে প্রথম দু-একদিন টিকিটের জন্য যাত্রীদের চাপ ছিল।’