বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

পরীমনির নারী হওয়াটাই অপরাধ : তসলিমা নাসরনি

ডেস্ক রিপোর্ট
আপডেট : আগস্ট ৬, ২০২১

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। গত ৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ‌্যা কান্ট্রি’। এ আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে পাশের দেশেও।

বিষয়টি নিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। লেখার শুরুতে তিনি লেখেন, ‘পরীমনিকে নিয়ে র‍্যাবের ব্রিফিং দেখলাম। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ংকর অপরাধ করেছে পরীমনি। অপরাধের মধ্যে যা বলা হয়েছে, তা হলো—পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে। তার বাড়িতে বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে। পরীমনি মদ্যপান করে, এখন সে মদে আসক্ত। নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক, যে তাকে সাহায্য করেছিল সিনেমায় নামতে, মাঝে মধ্যে পরীমনির বাড়িতে আসে, মদ্যপান করে। ডিজে পার্টি হতো পরীমনির বাড়িতে। আইসসহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে (এগুলোর চেহারা অবশ‌্য দেখানো হয়নি)। মদ খাওয়া বা সংগ্রহ করার লাইসেন্স আছে পরীমনির, তবে তার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, এখনো রিনিউ করেননি। তারপর আরো কিছু খবর দেখলাম, পরীমনি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি।’

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তসলিমা নাসরিন লিখেন, ‘মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনোটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব আসা, একসঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারো সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিংয়ে চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনো উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়, ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়াও তো অপরাধ নয়। পরীমনি নাকি একাধিক বিয়ে করেছেন, সেটিও কোনো অপরাধ নয়। অপরাধ তবে কোথায়?’

মদের বোতল ঘরে জমিয়ে রাখা অপরাধ কিনা তা জানা নেই তসলিমার। এ বিষয়ে তিনি লিখেন, ‘যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেনফিডিশ হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেপ্তার করা হলো, রিমাণ্ডে নেওয়া হলো! যে কটা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমনির বাড়িতে, মদের লাইসেন্সধারীদের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমনি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।’

গরীব থেকে কোনো নারী ধনী হলে মানুষের চোখ কপালে উঠে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয় না। বিষয়টি উল্লেখ করে তসলিমা লিখেনে,
‘সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি। কাউকে কি জোর করে মাদক গিলিয়েছে, মদ গিলিয়েছে, কারো সঙ্গে প্রতারণা করেছে মেয়েটি? ধাপ্পা দিয়ে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে? কাউকে খুন করেছে? অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমনি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে, কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে! যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে? পুরুষেরা যেমন দিন রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনো ধর্ষণ? অপরাধ খুঁজছি। নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ