বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সাইবার আইনের প্রত্যাহার হচ্ছে ৫৮১৮ মামলা নদী দূষণমুক্ত করা গেলে পরিবেশ উন্নত হবে ২৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক অফিস আদালত খুলেছে, যানচলাচল স্বাভাবিক ছাগলকাণ্ডে মতিউর ও তার স্ত্রী এবং সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত বরুড়ায় মামার বিরুদ্ধে ভাগিনার প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ! মোশারফ প্যারিস অলিম্পিকে ডাক পেলেন অলিম্পিক রিংয়ে সাজবে আইফেল টাওয়ার প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা! বরিশাল প্লে-অফে শক্তিশালী হচ্ছেন রওশন, দুর্বল জিএম কাদের! খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মিনিট পরপর চলবে মেট্রোরেল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন ৪৮ নারী প্রার্থী সিরিজ নির্বাচন করতে চায় ইসি

পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ২৫, ২০২২
padma-Span-01

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত ৬.১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের বহুমুখী পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার প্রক্রিয়াটা এত সহজ ছিল না। এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপরে বসেছে ৪১টি ইস্পাতের স্প্যান। একটি পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হয়েছে বলে জান যায়।

২০১৪ সালের ১৮ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর নদীশাসনের জন্য চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে।

এরপর স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে অংশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে স্প্যানের অবয়ব তৈরি করা। তারপর সেগুলোকে নির্ধারিত পিলারের উপর বসানোর জন্য পৃথিবীর সবচয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ানই স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় মাঝ নদীতে।

২০১৭ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রথম অবয়ব পেতে শুরু করে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান।

ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি ৩২ এবং ৩৩ নাম্বার পিলারের ওপর বসানো হলো ২১ তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ৫ এবং ৬ নাম্বার পিলারের ওপর বসেছে ২২ তম স্প্যান, ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে বসেছে ২৩ তম স্প্যান, ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪ তম স্প্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৫ তম স্প্যান, ১০ মার্চ বসেছে ২৬ তম স্প্যান, ২৮ মার্চ বসেছে ২৭ তম স্প্যান।

১১ এপ্রিল বসেছে ২৮ তম স্প্যান, ৪ মে বসেছে ২৯ তম স্প্যান, ৩০ মে বসেছে ৩০ তম স্প্যান, ১০ জুন বসেছে ৩১ তম স্প্যান, ১১ অক্টোবর ৩২ তম, ১৯ অক্টোবর ৩৩ তম, ২৫ অক্টোবর ৩৪ স্প্যান, ৩১ অক্টোবর বসছে ৩৫ স্প্যান, ৬ নভেম্বর ৩৬ তম, ১২ নভেম্বর ৩৭ তম, ২১ নভেম্বর ৩৮ তম স্প্যান, ২৭ নভেম্বর ৩৯ তম, ৪ ডিসেম্বর ৪০ তম স্প্যান এবং সবশেষ ৪১ তম স্প্যান বসানো হলো ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর।

২০১৭ থেকে ২০২০ তিন বছরের চেষ্টায় ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মাওয়া থেকে জাজিরা অংশে সংযোগের মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো ৬.৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।

ডাঙ্গার অংশসহ প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা বলছেন, পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কোনো নদীর ওপর সেতু বানাতে গিয়ে এতো গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। প্রকৌশলীরা আরও জানিয়েছেন, এরকম বিশাল ও প্রমত্ত একটি নদীর ওপর এতো বড়ো সেতু নির্মানের কাজ প্রকৌশলগত দিক থেকে ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। এজন্য পৃথিবীর বড় বড় তিনটি ড্রেজার আনা হয়েছিল।

পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ড. আইনুন নিশাত জানান, শীতের সময় পদ্মা নদীতে গভীরতা থাকে ১০০ ফুটের কাছাকাছি। বর্ষার সময় এই গভীরতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। একারণে চ্যালেঞ্জ ছিল নদীর ওই গভীরতায় সেতুর যেসব পাইল বসানো হবে সেগুলোর ফাউন্ডেশন তৈরি করা।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের নদীতে পাথর নেই। ফলে সেতুর পুরো ভার রাখতে হয় মাটিতে। একারণে নদীতে অনেক ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার এক একটির ওজন ৮০০ কেজি থেকে এক টন। নদীর তলদেশে যতটুকু যাওয়া সম্ভব অর্থাৎ ড্রেজিংয়ের ক্ষমতা যতোটুকু ছিল ততোটা গভীরে।
আইনুন নিশাত বলেন, সেতুর ভার বহন করার জন্য এর যতোটা গভীরে পাইল বসানোর দরকার ছিল সেটা ছিল অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ। এতো গভীরে যেতে হয়েছে কারণ উপরের ৬০ থেকে ৭০ মিটার শুধু পানি, যেখানে পাইলের কোন শক্তি নেই। অনেক গবেষণা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত ওই গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তখন সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।

এক নজরে পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য- ৬.১৫ কিলোমিটার
পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম- চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি
পদ্মা সেতুর প্রস্থ- চার লেন সড়কের সেতুটির প্রস্থ ৭২ ফুট
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হবে- নিচ তলায়
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন দুই প্রান্তে- ১২ কিলোমিটার
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য- দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার
পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা- ৩৮৩ ফুট।
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা- ৬০ ফুট।
প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং- ৬টি।
পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা- ২৬৪টি।

পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা- ৪২টি।
পদ্মা সেতুর স্প্যান সংখ্যা- ৪১টি
পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়- ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়- ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয় – ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর
পদ্মা সেতুর নির্মাণে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয়- মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুতে রেল ছাড়াও আরও রয়েছে- গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ