পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটিসহ ১১টি বেসরকারি ব্যাংক ৪৩৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক দেবে ২৫৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে জনতা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, চামড়া খাতে ব্যবসা মন্দ ও নিয়ম মতো ঋণ পরিশোধ না করায় এখাতে ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে চামড়ার দর অনেক কমে যাওয়ায় আগের মতো ঋণের প্রয়োজনও পড়ছে না। এছাড়া চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক। এসব কারণে প্রতিবছর দেশে পশু কোরবানির সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমছে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়ার কদরও কমে গেছে। তবে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে দাম বেড়েছে। তাই ট্যানারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে সরকারের সহায়তা চান।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ট্যানাররা ৪০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে ৪৩৩ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ২৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ হয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
মূলত এই চারটি ব্যাংকই চামড়া কেনায় ঋণ দেয়। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিলেও তার পরিমাণ খুবই কম। মূলত ১৯৯০ দশকে বিতরণ করা
চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত না আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে ঈদুল আজহার আগে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮৩ কোটি টাকা কিন্তু অর্ধেকেরও কম ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে।
এর ফলে আগের দেওয়া ঋণ খেলাপি হলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে পুনঃতফসিল করা যাবে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে, কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০-৬০০ কোটি টাকা ঋণ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে
চিঠি দেয় ট্যানারি মালিকরা।
ট্যানারি মালিকরা বলছেন, করোনা পরবর্তী ব্যবসায় টিকে থাকতে চাহিদার তুলনায় এবার যে পরিমাণ টাকা ঋণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তা আগের বছরের চেয়েই কম। আবার পেতেও ভোগান্তি। আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় ও ঋণের ব্যবস্থা করতে গত ২১ জুন বাণিজ্য সচিবকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সরকারি হিসাবে এবছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯ গবাদিপশু প্রস্তত রাখা হয়েছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাংখ ১৯ হাজার।
এবছর বাজারজাত করা গবাদিপশুর বাজার মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশন (বিডিএফএ) -এর সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান।