# আইসিইউ, অক্সিজেন, বেডসহ নানা সংকট হাসপাতালে # চিকিৎসা নিচ্ছেন ভ্যানে-গাছতলায় # ১-৭ জুলাই শনাক্ত হয়েছে ৬৪৩১০, মৃত্যু-১০৯০ জন # চলতি বছরের ৬ মাসে শনাক্ত – ৩৯৯৭৪৮, মৃত্যু-৬৯৪৪ জন।
দেশে গত কয়েক সপ্তাহ লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষ করে চলতি মাসের এক সপ্তাহে লাগামহীনভাবে বেড়েছে সংক্রম ও মৃত্যু। আর আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর শরীরেই মিলছে ডেল্টা ধরন। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর বিভাগ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে সরকার ফের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। গতকাল লকডাউনের এক সপ্তাহ শেষ হলো। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সপ্তাহেই সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। দেশে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে রিতিমত হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা সংকট। রোগীদের জন্য নেই চিকিৎসক, অক্সিজেন, আইসিইউ, সিটসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা। বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। রোগীরা অক্সিজেন পাচ্ছেন না, সিট না পেয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ভ্যানে, অ্যাম্বুলেন্সে, এমনকি গাছতলাতেও। প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকেই। সম্প্রতি বগুড়া ও যশোরে অক্সিজেন সংকটে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা শহরে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই ছুটছেন রাজধানীতে। কিন্তু রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও ফাঁকা নেই আইসিইউ। ফলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক করোনা রোগী। হাসপাতালে-হাসপাতালে স্বজন হারানো কান্নায় ভারি হচ্ছে বাতাস। গোরস্তানগুলোতে লম্বা হচ্ছে লাশের সারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন ঘোষণার পরই সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যেভাবে গ্রামে ছুটে গেছে এবং গ্রাম থেকে ছুটে এসেছে তাতে লকডাউনের কার্যকারিতা পেতে সময় লাগবে। ফলে আরও বাড়াতে হতে পারে লকডাউনের সময়। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা ডেল্টা ধরনে যেভাবে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে তাতে সামনে ঝুঁকি আরও বেশি। আর এর থেকে আরও বড় আতঙ্কের কথা হলো ঘরে ঘরে করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও পরীক্ষা করাতে বা চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও। আক্রান্ত রোগীর পরিস্থিতি বেসামাল হলেই হাসপাতালে নিয়ে ছুটছেন কিন্তু এসব রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ যে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বিকেলেই মারা যাচ্ছেন তার।
এদিকে দেশে গত একদিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৫৯৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২০১ জনের মধ্যে ৬৬ জনই খুলনার। এ ছাড়া ঢাকায় ৫৮, চট্টগ্রামে ২১, রাজশাহীতে ১৮, বরিশালে ৭, সিলেটে ৯, রংপুরে ১৪ এবং ময়মনসিংহে ৮ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া একদিনে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ১৬২ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮ জনে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত ১ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৩০১ আর মারা যান ১৪৩ জন। ২ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৪৮৩ ও মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। ৩ জুলাই জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৬২১৪ ও মারা যান ১৩৪ জন। ৪ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৬৬১ ও মারা যান ১৫৩ জন। ৫ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৯৯৬৪ ও মারা যান ১৬৪ জন। ৬ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১৫২৫ ও মারা যান ১৬৩ জন। অর্থাৎ চলতি মাসের গত সাত দিনে মোট শনাক্ত হয়েছে ৬৪৩১০ জন আর এ সময়ে মারা গেছে ১০৯০ জন।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত শনাক্ত ও মৃত্যু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে শনাক্ত ২১২৬০ ও মৃত্যু ৫৬৮। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত ১১৮৪৬ ও মৃত্যু ২৮১। মার্চে শনাক্ত ৬৪৬৭৯ ও মৃত্যু ৬৩৮। এপ্রিলে শনাক্ত ১৪৭৮৩৭ ও মৃত্যু ২৪০৪। মে-তে শনাক্ত ৪১৪০৮ ও মৃত্যু ১১৬৯। জুনে শনাক্ত ১১২৭১৮ ও মৃত্যু ১৮৮৪ জন। এর মধ্যে গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছিল। আর ৬ মাসে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩৯৯৭৪৮ জন ও মারা গেছে ৬৯৪৪ জন।