গত একদিনে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৯৩১ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৭১ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪১৩ জনে। মৃত ৫১ জনের মধ্যে পুরুষ ২২ জন ও নারী ২৯ জন।
রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৫৮৬ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২১ জন। সারাদেশে সরকারিও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮০২টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৪০টি, জিন এক্সপার্ট ৫৫টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৬০৭টি। এসব ল্যাবে গত একদিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৫ হাজার ১১২টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৪টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৩টি।
এতে আরও জানানো হয়, গত একদিনে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার সাত দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত একদিনে মৃত ৫১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে একজন, খুলনা বিভাগে নয়জন, সিলেট বিভাগে ছয়জন, রংপুর বিভাগে একজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৩ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে আটজন মারা গেছেন। মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দু’জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে আটজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন ও ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
এদিকে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার দুপুরে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেশিওলজি) পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগদান এবং ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা এখন সারা বিশ্বে প্রসংশিত। করোনা নিয়ন্ত্রণ কোনো ম্যাজিকের মাধ্যমে সম্ভব হয়নি। এটা কাজের ফল, প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত দিকনির্দেশনা এবং চিকিৎসক, নার্স ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ আজ ভালো আছে। দেশে করোনা সংক্রমণের হার ৭. ০৩ শতাংশ। তবে এটা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হবে, সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমছে। ফলে স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে।
দেশে অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট সংকট রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যানেস্থেশিওলজির নতুন নিয়োগটি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়া হয়েছে। আমাদের আরো অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট প্রয়োজন রয়েছে। আগামীতেও অ্যানেস্থেশিওলজিতে নিয়োগ দেয়া হবে। তাহলে এই সংকট আর থাকবে না। ডাক্তার, নার্সদের নিরাপত্তা বিষয় জাহিদ মালেক বলেন, অবশ্যই সবাইকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা অনেক স্থানে হতে পারে। সেটা কোনো উদাহরণ হতে পারে না। তবে আমরা যে বিষয়ে কাজ করি সেটা খুবই সেনসেটিভ।
অপরদিকে করোনা মহামারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোনও দেশের তুলনায় বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ কথা বলেছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন,পুরো বিশ্বের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও করোনা ভাইরাস ভীষণভাবে আক্রমণ করেছিল। এখনও দেখা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে একটু বেশি ঝুঁকির মাঝে আছে। এরপরেই রয়েছে ভারতের অবস্থান। এ দুই দেশে গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, যদিও প্রতিটি প্রাণই অনেক মূল্যবান। সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোনও দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে আমরা স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছি।