# ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন # ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭৯ জন # জুলাইয়ের মাত্র ১০ দিনে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০২ জনে # চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন।
করোনার এ দুঃসময়ে ডেঙ্গু যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে, তাতে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কীটতত্ত্ববিদদের গবেষণা বলছে, ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু মশার ঘনত্বের হার আগের তুলনায় অনেক বেশি।
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বছরব্যাপী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কাজ করেছে। নিয়মিত ওষুধ ছিটিয়েছে, পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করেছে। নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছে বাসা-বাড়িতে মশামুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানাও করেছে তারা। এতো কিছু করেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি মশাবাহিত রোগ। নগরে বেড়েছে মশার উপদ্রব। যে কারণে করোনা মহামারির মধ্যে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, শনিবার ২৪ ঘণ্টায় কেবল ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। এছাড়া বর্তমানে রাজধানীর ৪১টি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭৯ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন।
ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাঈদা নাসরিন বাবলি মারা গেছেন বলে জানা গেছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি তা সত্যি আশংকাজনক। জুন মাসে আমাদের জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের সব জায়গায় এডিস মশা আছে। জুন মাসের শুরুতে বলেছিলাম, ডেঙ্গুর ঘনত্ব বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তার প্রমাণ আমরা এখন পাচ্ছি। শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এটি আরও বাড়বে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে।
কবিরুল বাসার বলেন, ‘এ মুহূর্তে খুব প্রয়োজন নগরবাসী এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ। আমাদের বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমার পরিবেশ থাকলে সেটি যেন আমরা নষ্ট করে দিই। সিটি করপোরেশনের কাজ, যেসব পাবলিক প্লেসে পানি জমে সেসব স্থান নষ্ট করতে হবে। ইতিমধ্যে মশা বড় হয়ে গেছে, তাই উড়ন্ত মশাও মারতে উদ্যোগ নিতে হবে।’
রাজধানীজুড়ে ডেঙ্গু রোগের এমন ভয়াবহ অবস্থার সময় দুই সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নগরবাসী বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে দুই সিটির মশা নিধন কর্মীদের দেখা মেলেনি। অথচ এ সময় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম থাকার কথা ছিলো চোখে পড়ার মতো। আর এ কারণে ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দফায় বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মাধ্যমে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ এবং রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছিলো সংস্থাটি। এসব অভিযানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্থানে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পেয়ে সেগুলো ধ্বংস করেছে। সেই সঙ্গে অভিযানে সচেতনতার পাশাপাশি ছিলো জরিমানাও।
এসব অভিযানে মশা নিয়ন্ত্রণ না হলেও জরিমানা করে ডিএনসিসির আয় হয়েছে প্রায় পৌনে ১ কোটি টাকা। কিন্তু লাগাম টানা যায়নি ডেঙ্গু উপদ্রবের। একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। অবশ্য, ডিএনসিসির মতো ডিএসসিসি বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেনি। নামমাত্র নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলো। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যেও ছিলো চরম অসন্তোষ। খোদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মশা নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলো ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন। মে মাসে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৩ জনে। জুনে চলতি বছরের সকল রেকর্ড ভেঙে ২৭১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। জুলাইয়ের মাত্র ১০ দিনে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০২ জনে!
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি কি করতে যাচ্ছে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আগামী ১০ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করবে ডিএনসিসি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী নিজে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘দুভার্গ্যজনক হলেও সত্যি যে, সাধারণ মানুষকে সেভাবে সচেতন করা সম্ভব হয়নি। করতে পারলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না। এই মশা ডোবা-নালায় হয় না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৮০ শতাংশ নির্ভর করতে হচ্ছে নগরবাসীর উপর। বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করছে আমাদের উপর। আমরা গতবার যেভাবে জরিমানা করেছি এবারও তা শুরু হবে। যদিও জরিমানা আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য সচেতন করা।’
ডিএনসিসি ১০ দিনব্যাপী বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের সিদ্ধান্ত নিলেও ডিএসসিসি’র ব্যাপারে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ডিএসসিসি’র ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলমান। নাহলে এক সপ্তাহে সব মানুষ ডেঙ্গু রোগী হয়ে যেতো। ইতোমধ্যে মেয়র নির্দেশনাও দিয়েছেন যেনো ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রমে বাড়ির মালিকদের সম্পৃক্ত করা যায়।’