# একই ব্যক্তিকে একাধিক ডোজ ও নিবন্ধনে ভোগান্তির অভিযোগ # টিকা নিতে নিবন্ধিত ২ কোটি ২৫ লাখ
মহামারী দমনের লক্ষ্যে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় মানুষ উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে টিকা নিয়েছে। তবে একই ব্যক্তিকে একাািধক ডোজ, নিবন্ধনে ভোগান্তিসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগও পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় সারাদেশে ১৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রে টিকা দেয়া শুরু হয়।
ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। এই কর্মসূচি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলবে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রথম দিন বাদ পড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের ওয়ার্ডে টিকা দেয়া হবে ৮ ও ৯ অগাস্ট। এই দিনে টিকা দেয়া হবে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে।
আমাদের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য।
চুয়াডাঙ্গা : উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ টিকা নিয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় টিকা নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। জেলার সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, জেলার ৫৯টি কেন্দ্রের ১১৯টি বুথ থেকে প্রথম দিন টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ২৩ হাজার ৯০০ জনকে টিকা দেয়া যাবে এমন প্রস্তুতি আমাদের ছিল।
প্রতি বুথ থেকে ২০০ জনকে আমরা টিকা দিয়েছি। মানুষ নিজ উদ্যোগেই এসে টিকা নিয়েছে। কাল ও পরশু কেন্দ্রের সংখ্যা কম হবে। এভাবে টিকা থাকা সাপেক্ষে টিকাদান চলবে।
ভোলা : সকাল থেকেই বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে আগ্রহীদের ভিড় দেখা যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে টিকা গ্রহণকারীরা টিকা কেন্দ্রে আসেন। ভোলা পৌরসভায় টিকা কার্যক্রম অনলাইনে উদ্বোধন ঘোষণা করেন মেয়র মনিরুজ্জামান। এ সময় তিনি সবাইকে আগ্রহ সহকারে টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যাবাদ জানান বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রম চালু করার জন্য। সকালে ভোলা উপশহর বাংলা বাজার ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন জেলার ডিসি মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, ভোলার সিভিল সার্জন কে এম শফিকুজ্জামান।
যশোর : যশোরে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা দেয়া শুরু হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোর এক নম্বর ওয়ার্ডগুলোতে এই টিকা দেয়া হচ্ছে। একেকটি কেন্দ্রের তিনটি বুথে ৬০০ জনকে টিকা দেয়া হবে দৈনিক। মোট ৫৬ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেয়া হবে যশোরে। টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল ৯টায় সারা জেলায় একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আগ্রহী বয়স্ক নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সবাই মুখে মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন।
হাসপাতালগুলোয় টিকা কার্যক্রম শুরু হলে গ্রামের মানুষের টিকা নিতে আগ্রহ অনেকটাই ছিল না। তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ছিল। শনিবার মানুষের মধ্যে ভীতি দেখা যায়নি।
জামালপুর : জামালপুরে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। জেলার সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস জানান, জেলায় ৭৯টি কেন্দ্রে ২১৩টি বুথে টিকা দেয়া হবে। প্রথম দিনে ৪২ হাজার ৬০০ টিকা দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। জামালপুর পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ১২টি কেন্দ্রে প্রতিদিন টিকা দেয়া হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রে প্রতিদিন ২০০ করে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে তিটি বুথের মাধ্যমে ৬০০ করে টিকা দেওয়া হবে।
বান্দরবান : জেলার সিভিল সার্জন অংস্ইুপ্রু মারমা জানান, এ জেলার ৩৩টি ইউনিয়ন ও বান্দরবান পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড মিলে মোট ৪২টি কেন্দ্রে শনিবার টিকা দেয়া হয়। দিনব্যাপী টিকাদান কার্যক্রমে জেলায় ২১ হাজার প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের সেপ্টেম্বর ৭ তারিখে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রাম : জেলার ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় ৮৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে শনিবার মোট ৪৬ হাজার ৮০০ জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য বলে সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে টিকা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন জেলারি ডিসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
নাটোর :শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের শিবদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম।
নেত্রকোণা : জেলার ৯৮ কেন্দ্রে ৫৪ হাজার টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার কর্মসূচি, জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, মোট ৮৬ ইউনিয়ন ও পাঁচ পৌরসভার এসব কেন্দ্রে ৪৯০ জন কর্মী কাজ করছেন। তাদের মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে দুইজন টিকা প্রদানকারী ও তিনজন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তাদেরকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করছেন। প্রতিদিনি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা নাগাদ চলবে এই কর্মসূচি।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে গণটিকা কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সকাল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে মানুষ কেন্দ্রে হাজির হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা নিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা পেতে ইচ্ছুক মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়।
ফেনী : টিকা কর্মসূচির প্রথম দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে টিকা না নিয়েই। জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা তাহসীন নূর অমি বলেন, প্রথম দিন যারা টিকা নিতে পারেননি, পর্যায়ক্রমে তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। গণটিকাদান কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদানে গতি আসার পর তা নিয়ে আগ্রহও বেড়ে চলছে। টিকা নিতে সরকারের তৈরি সুরক্ষা অ্যাপে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিট পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ নিবন্ধন করছেন।
এই অ্যাপের দেখভালকারী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মাসুম বিল্লাহ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত প্রতি মিনিটে সাড়ে তিন হাজার, এবং প্রতি ঘণ্টায় দেড় থেকে দুই লাখ নিবন্ধন হচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে রাত ১০টার পর টিকার জন্য নিবন্ধনের সংখ্যাটা কমে যায়।
মাসুম বলেন, আগে টিকা নিবন্ধনের সংখ্যা তেমন বেশি ছিল না। নিবন্ধনের সংখ্যাটা এক কোটি ছাড়িয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। কিন্তু গত ২৫ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময় থেকে টিকা নেয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বোধহয় তখন থেকে নিবন্ধনের সংখ্যাটাও দ্রুত বেড়েছে।
বছরের শুরুতে ২৬ জানুয়ারি থেকে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন চালুর পর দেড় কোটি জন প্রথম ডোজ এবং ৫০ হাজার জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা ইতোমধ্যে নিয়েছেন বলে শনিবারই এক অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। টিকা সঙ্কটের কারণে মে মাসে নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলেও ৮ জুলাই থেকে নিবন্ধন পুরোদমে চলছে। এরমধ্যে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ২৫ বছর করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ৬০ লাখ ৪২ হাজার ২৪৭ জন পুরুষ, ৩৮ লাখ ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭০৬ জন নারী। দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ২৮ লাখ ৯ হাজার ৮৩৬ জন পুরুষ, ১৬ লাখ ৬ হাজার ২৯৫ জন নারী।