প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে চট্রগ্রামে। ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল করোনা রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। গুরুতর অসুস্থ কোনো করোনা রোগীর জন্যও মিলছে না আইসিইউ বেড।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে মিলছে না একটি সাধারণ বেডও। হাসপাতালের ভর্তি করে ফ্লোরে রেখে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে করোনা চিকিৎসার এই হাহাকার চিত্র পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতল ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আইসোলেশন এবং অক্সিজেন সুবিধাসহ করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ১৫০টি বেড। কিন্তু এর বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ১৭০ জন। এই হাসপাতালের ১৭টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত করোনা রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১৩১০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৮ জন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম জানিয়েছেন. চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিটের সক্ষমতা বাড়িয়ে ৩০০ শয্যা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৩১৩ জন। খালি নেই একটিও আইসিইউ বেড।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের পর সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা ইউনিটে শয্যা রয়েছে ১৬২টি। ভর্তি রয়েছেন ১৭০ জন। এখানে ২০ শয্যার আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
একই ভাবে চট্টগ্রামের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, সিএসসিআর, পার্ক ভিউ, মেট্রোপলিটন, ন্যাশনাল হাসপাতালসহ কোন হাসপাতালেই নতুন করে করোনা রোগী এবং আইসিইউতে রোগী ভর্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঐসব হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
নওশীন আনজুম নামের গুরুতর অসুস্থ এক রোগীর স্বজন সকালে জানান, তার বাবা অসুস্থ। একটি আইসিইউ বেডের জন্য সোমবার থেকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। কিন্তু কোন হাসপাতালেই একটি আইসিইউ বেড খালি পাচ্ছেন না।
এক রোগীর স্বজন সাব্বির হোসেন জানান, তার বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউ সাপোর্টের কথা বলেছেন। কিন্তু কমপক্ষে চট্টগ্রামের ১৪টি হাসপাতাল ঘুরেও কোন আইসিইউ বেড ম্যানেজ করতে পারেননি। এমন চিত্র চট্টগ্রামের প্রতিটি হাসপাতালেই।
সরেজমিন চট্টগ্রাম নগরীর হাসপাতাল ক্লিনিকপাড়া খ্যাত জিইসি ওআরনিজাম রোড, গোলপাহাড়, মেহেদীবাগ, প্রবর্তক এবং মেডিক্যাল এলাকা ঘুরে অ্যাম্বুলেন্সের ছুটোছুটির ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। স্বজনরা রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন।