দূর-পাল্লার যানবাহন স্বাভাবিক
টানা সাধারণ ছুটির পর গতকাল বুধবার দেশের সকল সরকারি ,আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ,সরকারি- বেসরকারি ব্যাংক বীমা খুলেছে।সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার দেশের সকল আদালতে বিচার কার্য পরিচালনা হয়েছে। এছাড়া দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোও খুলেছে পুরোদমে।
এদিকে সচিবালয়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের জন্য কোনও ‘পাশ’ ইস্যু করা হচ্ছে না।ফলে অনেকেই কাঙ্খিত প্রয়োজনে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে গেছেন মন খারাপ করে। তবে আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন যাদের পাশ আছে তাদের জন্য কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু যাদের পাশ কার্ড নাই তারা বিড়ম্বনায় পড়েছেন স্বাভাবিক ভাবেই।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে সচিবালয়ে আসতে শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিটি গাড়ি ভালোভাবে দেখে তারপর সচিবালয়ে প্রবেশ করানো হয়। সন্দেহ হলে মোটরসাইকেলগুলোতে বিশেষ তল্লাশি চালানো হয়েছে। ব্যাগও তল্লাশি করা হচ্ছে। সচিবালয়ে প্রবেশে এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সচিবালয়ে পায়ে হেঁটে এই স্থান দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। প্রতিজনকে চেক করে সচিবালয়ে প্রবেশ করানো হয় বলে গতি ধীর হয়, অনেকেই অপেক্ষা করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কারো কারো শরীর তল্লাশি করা হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে তা হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন কর্মকতা কর্মচারীরা।
অন্যান্য দিনের মতো টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সচিবালয়ের প্রবেশ গেটগুলোতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান করছে। বাড়িয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সচিবালয়ের সামনে সেনাবাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতন।বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, রাস্তায় আসতে তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। বরং বিভিন্ন জায়গায় যানজটে পড়েছেন।তারা জানিয়েছেন অফিস খুলে দেওয়ায় তারা খুশি। আগামী রোববার থেকে পুরোদমে অফিস শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে টানা ছুটির পর সরকারি নির্দেশে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার অফিস খোলার স্বার্থে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত অফিস খোলার অনুমতি দেয় সরকার । তবে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,গাজীপুর ও নরসিংদীতে বিকাল ৫ টা থেকে পূর্বেও মতন কারফিউ বহাল থাকবে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
এদিকে অফিস আদালত খোলার খবরে রাজধানীতে চাকুরীজিবীদের ভীড় বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে যারা সংকটময় সময়ে আতংকিত হয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তারা ঢাকায় ফিরেছেন যার যার মতন করে বিভিন্ন বাহনে। আর তাই গতকাল বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে অফিসগামী মানুষদের ভিড় দেখা গেছে। তবে সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
পূর্ব ঘোষণা অনুসারে সকালে ১১টার দিকে খোলে সচিবালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ কর্মকতারা যথাসময়ে অফিসে এসেছেন। তবে সরকারি অফিস খুললেও আজ পরিবহন পুলের গাড়ি কোথাও যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।যার দরুন বেশ বেকাদায় পড়েছেন অনেকেই। সময়মত পরিবহন পুলের গাড়ি না যাওয়ায় অনেককে আসতে হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবস্থায়। সড়কে যানবাহন কম থাকায় আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
কারফিউ জারি হওয়ায় গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি দিয়েছিল সরকার। কারফিউ শিথিল হওয়ার পর গতকাল বুধবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।এর আগে গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়,গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সব সরকারি,আধা সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসের জন্য বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এসময় চলমান কারফিউও শিথিল থাকবে।
তিন দিনের সাধারণ ছুটির পর গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে অফিস-আদালতের কার্যক্রম। গতকাল রাজধানীসহ চার জেলায় সাত ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে।সেই সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবারসহ সকাল ১১টা থেকে চার ঘন্টার জন্য সরকারি–বেসরকারি সব অফিস খোলা থাকবে।এছাড়া গতকাল দিনের বেলাতেই বিভিন্ন রুটে সীমিত পরিসরে চলতে শুরু করেছে দূরপাল্লার যানবাহন।মঙ্গলবার রাত থেকে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে।
এছাড়া মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। যানবাহন বেড়েছে ঢাকার সড়কেও। সীমিত পরিসরে খুলছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।টানা তিন কার্যদিবস বন্ধ থাকার পর খুলেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।ব্যাংক খোলার খবরে শাখায় শাখায় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
ব্যাংকগুলোর শাখার প্রতিটি সেবা কাউন্টারে উপস্থিত সিংহভাগ গ্রাহকই এসেছেন টাকা উত্তোলন করতে। দু-একজন জমা দিতে এসেছেন।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়কে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যদের টহল রয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৬ জুলাই থেকে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, যা এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। এর জেরে বৃহস্পতিবার থেকে অচলাবস্থা তৈরি হয় আমদানি ও রপ্তানিতে। আর পরদিন শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারির পর বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ শিল্পকারখানা।