শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

হিরোইজম দেখাতে শিক্ষককে মারধর করে জিতু: র‌্যাব

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ৩০, ২০২২

বান্ধবীর সামনে নিজের ক্ষমতা দেখাতেই আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা করে অভিযুক্ত ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছে সে।

বান্ধবী ও জিতুকে কলেজ ক্যাম্পাসে শাসন করার কারণে স্কুলের শৃঙখলা কমিটির সভাপতি উৎপল কুমার সরকারকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে জিতু। আজ বৃহস্পতিবার (৩০শে জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, অভিযুক্ত জিতু নিজের নামে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং চালাতো। গত সোমবার আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু প্রথমে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমারের মাথায় আঘাত করে। পরে এলোপাতাড়ি মারধরে তার মৃত্যু হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে জিতুকে ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন শিক্ষক উৎপল সরকার। এসময় তিনি তাকে অযাচিত ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকতে বলেন।

এ ঘটনায় জিতু শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে শিক্ষকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ জুন ক্রিকেট স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। পরে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, জিতু শিক্ষক উৎপল সরকারকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন উৎপল সরকার মারা যান। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় থাকলেও পরে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে প্রথমে বাসে করে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। সেখানে এক রাত থেকে পরদিন আরিচা ফেরিঘাটে যায়। সেখান থেকে ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার পরিচিত একজনের বাড়িতে আত্মগোপন করে।

‘পরদিন ভোরে সে আবারো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে আতাইকুলা থেকে বাসে কাজীরহাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। লঞ্চে করে আরিচাঘাট পৌঁছে। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জিতু প্রথমে স্কুল পড়াশোনা করতো। পরে সে মাদরাসায় ভর্তি হয়। এরপর আবার সে স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। জিতুর জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো জিতু। স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিতু তার নেতৃত্বে এলাকায় জিতু দাদা নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতো। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারী গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।’

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, ধূমপান ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করানোসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সিলিংয়ে মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশেও ভূমিকা রাখতেন তিনি।’

জিতুর বাবাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। তাই জিতুর বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন। আমরা জিতুকে গ্রেফতারের আগে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে র‌্যাব সবসময় প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রকৃত আসামি জিতুকে গ্রেফতার করেছি। তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।’

জিতুর পরিবার থেকে শিক্ষক উৎপল সরকারের পরিবারকে হুমকি-ধামকির বিষয়ে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা উৎপল সরকারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এমন কোনো হুমকি-ধামকির বিষয়ে তথ্য পাইনি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ